নির্দেশ অমান্য করে কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ নিচ্ছে শিপিং কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩১ পিএম, ১৬ মে ২০২০

প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করছে, ঠিক এই সময়ে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ অব্যাহত রেখেছে শিপিং কোম্পানিগুলো। চলমান সংকটকালে এ ধরনের চার্জ নেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকার ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে পুরনো ও বড় সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। তাদের দাবি, বাড়তি চার্জের কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। ফলে রফতানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে, একই সঙ্গে স্থায়ী ভোক্তাদের জন্য আমদানি করা পণ্যের মূল্যও বেড়ে যাবে। তাই চলমান পরিস্থিতিতে কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করার পাশাপাশি নতুন বা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ থেকেও বিরত থাকার দাবি তুলেছে সংগঠনটি।

শনিবার (১৬ মে) ডিসিসিআই এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায়।

এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকার সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি (কার্যত লকডাউন) ঘোষণা করেছে যা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার যদিও সমুদ্র বন্দরগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে, তবু অন্যান্য সেবাখাত অনেকাংশেই বন্ধ বা সীমিত থাকায় পণ্য বা কন্টেইনার খালাসে অনিচ্ছাকৃত দীর্ঘসূত্রতা হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি, রফতানি কার্যক্রমের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যও তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসতে পারছে না, তার ওপর লকডাউন চলা অবস্থায় কিছু বিদেশি শিপিং কোম্পানি বা এজেন্ট তৃতীয় পক্ষ আমদানিকারকদের ওপর তাদের মর্জিমত অতিরিক্ত কন্টেইনার ডিটেনশন বা ডেমারেজ চার্জ আরোপ করছে। কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে শিপিং কোম্পানি বা এজেন্ট বা তাদের মনোনীত ফ্রেইট ফরওয়াডার্সরা এ অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করতে পারছে। শিপিং কোম্পানি অথবা তাদের মনোনীত এজেন্ট কর্তৃক অনিয়ন্ত্রিত কন্টেইনার ডিটেনশন বা ডেমারেজ চার্জ আরোপের ফলে আমদানিকৃত উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বাড়ছে, যা আমাদের বিশ্ববাজারে রফতানি সক্ষমতাকে হ্রাস করছে। স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য আমদানি করা পণ্যের মূল্যও এতে বাড়ছে।

ডিসিসিআই বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা বাণিজ্য কার্যক্রম যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদফতর গত ২৯ এপ্রিল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে শিপিং লাইনসকে বা তাদের মনোনীত এজেন্টদের আমদানিকারকদের ওপর লকডাউন চলাকালে কোনো প্রকার ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। নৌ-পরিবহন অধিদফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সত্ত্বেও শিপিং কোম্পানিগুলো কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ অব্যাহত রেখেছে, যা এ কঠিন সময়ে আমদানিকারকদের ওপর বাড়তি বোঝা হিসেবে নিপতিত হচ্ছে।

লকডাউন চলাকালে শিপিং লাইনস বা এজেন্টসমূহের কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করার পাশাপাশি নতুন বা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ থেকেও বিরত থাকার দাবি করে ডিসিসিআই।

সংগঠনটি জানায়, ‘পোর্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬’ মোতাবেক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে যদি কোনো শিপিং লাইনস বা এজেন্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো বিধিমালা বহির্ভূত কাজ করে তবে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। তাছাড়া, বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা থাকা উচিত যাতে করে আমাদানি-রফতানি পণ্যের জাহাজীকরণের সময় যৌক্তিক ও যথোপযুক্ত হারে কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ নির্ধারিত হতে পারে।

‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ২০০৬ সালে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন মোতাবেক যে লাইসেন্স আইনের অধীন শিপিং লাইনের এজেন্টসমূহ বা ফ্রেইট ফরওয়ারডার্সরা পরিচালিত হয়ে থাকে সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, এজেন্টসমূহ বা ফ্রেইট ফরওয়ারডার্সদের রাষ্ট্র প্রণীত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রণীত আইন, নীতিমালা, বিধিসমূহ, নির্দেশনা, বিজ্ঞপ্তি বা নোটিশ মেনে চলতে হবে অন্যথায় ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস বা শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। যেহেতু এজেন্ট বা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডসরা মূল শিপিং লাইনসের হয়েই কাজ করে তাই মূল শিপিং লাইনসগুলোকেও এই নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে যে নৌ-পরিবহন অধিদফতর কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহকে (বিজ্ঞপ্তি নং- ডিজি শিপিং ০৭/২০২০ তারিখ ২৯ এপ্রিল, ২০২০) রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে যেন লকডাউন চলাকালে সংগৃহীত কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ শিপিং লাইনসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আউটওয়ার্ড রেমিটেন্স হিসেবে বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধ না করা হয়’— বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ কত হতে পারে তার একটি সুনির্দিষ্ট সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কেননা মাঝেমধ্যে দেখা যায়, কনসাইনমেন্ট বা চালানের মোট মূল্যের চেয়ে ক্রমবর্ধিত ডেমারেজ চার্জ বেশি নির্ধারিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ এর ৭৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা যেতে পারে, যার ফলে আমদানিকারকদের ওপর তাদের পূর্বানুমোদন ছাড়া শিপিং লাইনসগুলো মর্জিমত ডেমারেজ চার্জ আরোপ করতে পারবে না। যদি অন্যান্য দেশের উদাহরণ দেখা হয় তাহলে দেখা যায় যে, ভারত ও নিউজিল্যান্ড তাদের শিপিং লাইনসগুলোকে ইতোমধ্যে লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় পক্ষ আমদানিকারদের ওপর ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করতে অনুরোধ করেছে। ভারতের ও নিউজিল্যান্ডের শিপিং লাইনসগুলো তাদের রাষ্ট্র প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে আমদানিকারকদের চার্জ মওকুফ করে পত্র প্রদান করেছে।

বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো বা অফ-ডক পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে লকডাউন চলার সময়ে খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ও রফতানি পণ্য কন্টেইনারে লোডিং চার্জ মওকুফ করার আহ্বান জানায় ডিসিসিআিই। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের এ ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন বন্দর সম্পর্কিত চার্জসমূহ, যেমন ক্রেন চার্জ, লোডিং, আনলোডিং চার্জ, কন্টেইনার ডিসচার্জিং চার্জ কমানোর আহ্বানও জানায় সংগঠনটি।

এসআই/এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।