আরেক দফা কমল ব্রয়লার মুরগির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ০১ জুন ২০২০

ঈদের আগে অস্বাভাবিকভাবে বাড়া ব্রয়লার মুরগির দাম ঈদের পরে দফায় দফায় কমছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সোমবার (১ জুন) একদিনের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের শুরুতে মুরগির দাম কিছুটা কমেছিল। এরপর রোজার শুরুতে চাহিদা বাড়ায় ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বাড়ে। ঈদের আগে কয়েক দফা দাম বেড়ে কেজি ২০০ টাকা স্পর্শ করে। তবে ঈদের পর চাহিদা কমায় আবার ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। যা গত শনিবার (৩০ মে) ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর শুক্রবার (২৯ মে) বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকায়।

ঈদের আগের দিন বেশিরভাগ বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। কোথাও কোথাও ২০০ টাকা কেজিও বিক্রি হয়। অর্থাৎ ঈদের পর এক সপ্তাহে কেজিতে মুরগির দাম কমেছে ৬০ টাকা পর্যন্ত।

ঈদের পর পোল্ট্রি মুরগির এই দাম কমার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) প্রতিবেদনে। টিসিবির তথ্য, এক সপ্তাহে পোল্ট্রি মুরগির দাম কমেছে ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

মুরগির এমন দাম কমার বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনজুর মোরশেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মুরগির বাচ্চার দাম কমে যাওয়ায় অনেকে ১-২ টাকায় পিস কিনেছেন। সেই বাচ্চা এখন বড় হয়েছে। ফলে বাজারে পোল্ট্রি মুরগির সরবরাহ বেড়ে দাম কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘মুরগির সঙ্কট থাকায় ঈদের আগে ফার্মে ব্রয়লারের কেজি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এখন তা কমে ১১০ টাকায় নেমেছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা কী দামে বিক্রি করছেন, তা আমি বলতে পারব না। ফার্মের দামের সঙ্গে খুচরার দামের মিল পাওয়া যাবে না। যখন চাহিদা বাড়ে, তখন তারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। আবার চাহিদা কমলে ফার্মের কাছাকাছি দামে বিক্রি করে।’

ব্রয়লার মুরগির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগির অনেক চাহিদা ছিল। কিন্তু ঈদের পর মুরগি তেমন বিক্রি হচ্ছে না। পাইকারি বাজারে মুরগির দাম কমে গেছে। ফলে আমরা কম দামে মুরগি বিক্রি করতে পারছি।’

কাপ্তান বাজারে ১৩০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা রাজন বলেন, ‘ঈদের আগে মুরগির যেমন অস্বাভাবিক দাম বেড়েছিল, এখন তেমনি অস্বাভাবিক দাম কমছে। ফার্মে প্রতিদিনের মুরগির দাম কমছে। ঈদের আগে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ছিল অনেক কম। আর এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে সাধারণত চাহিদা বাড়ায় মুরগির দাম বাড়ে। তবে এবার আমাদের ধারণার বাইরে দাম বেড়েছিল। এই মুরগির দাম এক সপ্তাহের মধ্যে ১৩০ টাকায় নেমে আসবে, এটাও আমরা ধারণা করতে পারিনি। ঈদের আগে শুনেছিলাম, বাচ্চার অভাবে অনেক ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুনছি কম দামে কেনা সব বাচ্চা একসঙ্গে বড় হয়ে গেছে। মুরগি বেশি দিন খামারে রাখা সম্ভব না। তাই কম দামে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।’

যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী মামুন বলেন, ‘করোনার শুরুর ‍দিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১১০ টাকা বিক্রি করেছি। তারপর ক্রেতা সেইভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে রোজার শুরু থেকে পোল্ট্রির চাহিদা বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বেড়ে কেজি ১৮০ টাকা হয়ে যায়। এখন বিক্রি না হওয়ায় আবার দাম কমে কেজি ১৫০ টাকার নিচে চলে এসেছে।’

রামপুরার বাসিন্দা শিমুল আক্তার বলেন, ‘ঈদের আগের দিন পোল্ট্রি মুরগি ১৯০ টাকা কেজিতে কিনেছিলাম। আজ ১৪০ টাকা কেজি কিনেছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করে ঈদের আগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ ঈদের আগে দাম বাড়ালে মানুষ বাধ্য হয়ে কিনবে। কিন্তু এখন বেশি দাম দিয়ে মানুষ না কেনায় দাম কমে গেছে।’

মালিবাগ হাজীপাড়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণে গরিব মানুষের কষ্ট হয়েছে। কারণ গরু ও খাসির মাংসের যে দাম, গরিব মানুষের পক্ষে তা কিনে খাওয়া সম্ভব না। ফলে তারা ব্রয়লার মুরগির মাংস খায়। কিন্তু এবার ঈদের আগে এটার যে দাম বেড়েছিল তাতে অনেকের ভাগ্যে ঈদের দিন মাংসও জোটেনি।’

এমএএস/এফআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।