করোনায় পাঁচ শতাধিক ব্যাংকার আক্রান্ত, মারা গেছেন ১৭ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ১৩ জুন ২০২০

# রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে বেশি আক্রান্ত
# করোনার উপসর্গ সহস্রাধিক ব্যাংকারের

নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ব্যাংকগুলোতে। এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাস পাঁচ শতাধিক ব্যাংকারকে সংক্রমিত করেছে। এতে মারা গেছেন ১৭ জন। এছাড়া উপসর্গ দেখা দিয়েছে সহস্রাধিক কর্মকর্তার মধ্যে। বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও অনেক ব্যাংক যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। নিরাপত্তাহীনতায় চলছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই নেই। গাদাগাদি করে অফিস করা, লিফটে ওঠা, অধিক লোক সমাগমের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন ব্যাংকাররা। তাই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্তু ব্যাংকার আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে মোট ১৭ জনের। তাদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৩ জন, রূপালী ব্যাংকের ২ জন, দি সিটি ব্যাংকের ৩ জন, এনসিসি ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার ১ জন, উত্তরা ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার ১ জন, জনতা ব্যাংকের ২ জন, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ জন, অগ্রণী ব্যাংকের ১ জন ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ২ জন ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১ জন।

করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। এর মধ্যে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত চার (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) ব্যাংকেই প্রায় আড়াইশ কর্মকর্তার শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে ছুটিতে গেছেন পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা। এরই মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন- সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) মাহবুব এলাহী। এছাড়া আরও দুজন কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির এমডি। তাদের নাম জানা যায়নি। রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম খান এবং মিজানুর রহমান। জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের প্রশাসন শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার হাসিবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের মুজতবা শাহরিয়ার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ এবং ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ক্যাশ ম্যানেজমন্ট বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সামসুদ্দিন, এনসিসি ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জামশেদ হায়দার চৌধুরী, উত্তরা ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার কর্মকর্তা ওয়াহিদ মর্তুজা, ন্যাশনাল ব্যাংকের এসএভিপি মো. বাশার, অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মো আব্দুল মালেক, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার ক্যাশ ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান। কৃষি ব্যাংকের বান্দরবান জেলার আলীকদম শাখায় কর্মকর্তা আমিরুল আজিজ।

এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের অন্যতম শিল্পপতি এস আলম গ্রুপ ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদ আলম। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী।

এদিকে করোনায় বেসরকরি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেযে বেশি আক্রান্ত ইসলামী ব্যাংকের ১০০ জন। মৃত্যুর সংখ্যা বেশি সিটি ব্যাংকের তিনজন। করোনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এ ব্যাংটিতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। ব্যাংকটিতে এখন পর্যন্ত ১২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। অন্তত ২০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় ছুটিতে আছেন। এসব তথ্য জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান।

শুধু সোনালী ব্যাংক নয়, সব ব্যাংকেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের হার। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকেও শতাধিক কর্মকর্তা ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে গত ৪ জুন কর্মকর্তাদের দাবির মুখে রোস্টারিং পদ্ধতিতে অফিস কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগেই দি সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংকসহ অনেকেগুলো ব্যাংকই রোস্টারিং চালু করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, এই মুহূর্তে আমার কাছে আক্রান্তের সঠিক তথ্য নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকেও এখন রোস্টারিং পদ্ধতিতে অফিস করছেন কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যেও আক্রান্ত থাকতে পারে, তারা হয়তো জানাচ্ছে না। এই সংখ্যা ৫০ বা ১০০ জন বা তার চেয়ে বেশিও হতে পারে। তবে এইচআরডি তথ্য সংগ্রহ করছে। সঠিক তথ্য পেলে আমি আক্রান্তের বিষয়টি জানাতে পারব।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শারীরিক দূরত্ব মানার জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আসন বিন্যাসে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ব্যাংকগুলোতে রোস্টার পদ্ধতি করা হলেও তা মানা হচ্ছে না।

এসআই/বিএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।