জেকেজির সাবরিনার ব্যাংক হিসাব জব্দে চিঠি
জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা তথা জেকেজি হেলথের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
একই সঙ্গে তাদের হিসাবের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট কে সি লিমিটেডের পরিচালক ইব্রাহিম খলিলের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তথ্য চেয়েছে এনবিআর।
রোববার (১২ জুলাই) এনবিআর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকে পৃথক চিঠি দেয়া হয়েছে বলে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল দুপুরে। কয়েক ঘণ্টা (জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এর আগে, গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে।
এর পর ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় দণ্ডবিধি ৪০৬/৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/২৬৯ ধারায় প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। আটজনকে আটক করা হয়েছে। সাহেদসহ ৯ জন পলাতক রয়েছেন।
ওইদিন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) বাতিলসহ অবিলম্বে হাসপাতালটির সব কার্যক্রম বাতিল এবং সিলগালা করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সাহেদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে।
সিআইসি সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আলোচ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একক ও যৌথ নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাবে থাকা লেনদেন অপ্রচলনযোগ্য (ফ্রিজ) করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের তথ্য, কর ফাইলে দেখানো তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। এর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা গেলে বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, জেকেজি (জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার) এবং রিজেন্ট হাসপাতাল দুটি নাম বর্তমানে আলোচিত। অবিশ্বাস্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার কাছে জেকেজির মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতারণা যদিও নস্যি।
তারপরও তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, জেকেজির ২৭ হাজার রিপোর্টের প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার রিপোর্টই ভুয়া। পুলিশ জানায়, জেকেজি হেলথ কেয়ার থেকে মোট ২৭ হাজার করোনার রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে আইইডিসিআরের মাধ্যমে। এই রিপোর্টগুলো ছাড়া বাকি ১৫ হাজার ৪৬০টি রিপোর্টই ভুয়া।
টাকা নিয়ে মানুষের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে কম্পিউটারে বানানো সনদ। অথচ এই রিপোর্টগুলোর জন্য তারা জনপ্রতি ৫-১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। আর রিজেন্ট হাসপাতালও একইভাবে নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দিত।
এসআই/এফআর