আতঙ্কে ব্যাংকাররা : কর্মী ছাঁটাই বন্ধ ও বেতন না কমানোর দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২০

গত কয়েক মাসে দেড় শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাই করেছে বেসরকারি এবি ব্যাংক। ব্যয় কমানোর নামে এর আগে ওয়ান ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও এবি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে মহামারির এ দুর্যোগের সময়ে আতঙ্কে রয়েছেন ব্যাংকের কর্মীরা। তাই বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে তাদের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানোর চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসাসহ ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানোর অন্য বাস্তবভিত্তিক পন্থা অবলম্বন করার দাবির জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

সোমবার (১৩ জুলাই) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মীদের সংগঠন ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (বিডব্লিউএবি) পক্ষ থেকে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট কাজী মো. শফিকুর রহমান এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (বিডব্লিউএবি) মনে করে, ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানো কোভিড-১৯ বা অন্য সংকট মোকাবিলায় সমাধান হতে পারে না। বিডব্লিউএবি আশা করে, সকল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানোর চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানোর অন্য বাস্তবভিত্তিক পন্থা অবলম্বন করবে।

তবে করোনা সংকটের মধ্যেও বেশ কিছু ব্যাংক বেতন না কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ইউসিবি, এসবিএসি, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এজন্য এসব ব্যাংককে সাধুবাদ জানিয়েছে বিডব্লিউএবি।

বিডব্লিউএবি বলছে, যেসব ব্যাংকে চাকুরিচ্যুত বা বেতন কমানো হয়েছে, সেখানকার কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ। অন্য ব্যাংকগুলোতেও চাকুরিচ্যুতি বা বেতন কমানোর আতঙ্ক রয়েছে। সাধারণ জনগণ মনে করে, ব্যাংকগুলো তার কর্মকর্তাদের বেতনেরই যদি সুরক্ষা দিতে না পারে, তাহলে গ্রাহকরা তাদের আমানতের সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত হবে কীভাবে? এর ফলে বেসরকারি ব্যাংকের ওপর আস্থা কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে উৎসাহ হারায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আমরা বিরত থাকতে বলেছি। এই করোনা মহামারির সময় তাদের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত যেন না নেয়া হয়। আর সরকার এই সময় করোনা মোকাবিলায় ব্যাংকের মাধ্যমে বেশকিছু আর্থিক প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। কোনো কারণে সেগুলোও যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। বিবৃতিতে তার এ বক্তব্যকে উদ্ধৃত করেছে বিডব্লিউএবি।

ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারির আবির্ভাবের শুরুতে সরকারি সকল অফিসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা সে সময়েও ডাক্তার, অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য সম্মুখযোদ্ধাদের ন্যায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্র মতে, এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ মহামারিতে অন্তত ৩৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আনুমানিক ২০০০ জন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতান্তই ‘অমানবিক’ বলছে বিডব্লিউএবি।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিডব্লিউএবি বলছে, এ সিদ্ধান্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের হতাশাগ্রস্ত করবে। তারা কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এবং ব্যাংকিং সেক্টরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

‘কোভিড-১৯ ও অন্যান্য যেকোনো আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে অনুপ্রেরণা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যাতে তারা নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে ব্যাংকের উন্নয়ন ও গতিশীলতায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেন। কেননা ব্যাংক কর্মকর্তারাই ব্যাংক কার্যক্রমের মূল চালিকা শক্তি।’

বিডব্লিউএবির দাবি

ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত না করা বা পদত্যাগে বাধ্য না করা এবং তাদের বেতন না কমানো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অফিসে কাজ করার বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করা। বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনটি।

এসআই/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।