খরচ কমেছে ১০ ব্যাংকের এমডির
অডিও শুনুন
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে জনজীবন ও অর্থনীতিতে নেমে আসে স্থবিরতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সাধারণ ছুটির মধ্যে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকলেও করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি বেশিরভাগ ব্যাংক। ফলে খরচ কমাতে অনেক ব্যাংক কর্মীদের বেতন কমানোর উদ্যোগ নেয় এবং কয়েকটি ব্যাংক তা বাস্তবায়নও করে।
করোনাকালে বিভিন্ন ব্যাংকের খরচ কমানোর উদ্যোগের মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন, এই তিন মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পেছনে খরচ কমেছে।
এই তিন মাসে ব্যাংক ১০টির এমডির পেছনে খরচ হয়েছে চার কোটি ২২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বা ১৬ শতাংশ কম। গত বছরের একই সময়ে এই ১০টি ব্যাংকের এমডির পেছনে খরচ হয় পাঁচ কোটি ৭৩ হাজার টাকা।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এমডির পেছনে সবচেয়ে বেশি খরচ কমেছে ঢাকা ব্যাংকের। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এমডির পেছনে ব্যাংকটির খরচ কমেছে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খরচ কমার হার ৪৪ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে ঢাকা ব্যাংকের এমডি বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পারিতোষিক বাবদ নিয়েছেন ২৯ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫১ লাখ ৫০ হাজার।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডির পেছনে খরচ কমেছে ১৫ লাখ ২১ হাজার ৬৯৩ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকটির এমডি নিয়েছেন ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৭ টাকা। গত বছরের একই সময়ে খরচ হয় ৭৫ লাখ ১১ হাজার ২১০ টাকা। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ব্যাংকটির এমডির পেছনে খরচ কমেছে ২০ শতাংশ।
এমডির পেছনে ১০ লাখ টাকা খরচ কমানোর মাধ্যমে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি নিয়েছেন ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে নিয়েছেন ২৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে এমডির পেছনে খরচ কমার তালিকায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিটি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।
এর মধ্যে সিটি ব্যাংকের সাত লাখ ৩১ হাজার ৯১২ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের দুই লাখ ২৪ হাজার ৬৫০ টাকা, যমুনা ব্যাংকের ৮০ হাজার টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ২৫৮ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের তিন লাখ টাকা এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের এক লাখ ছয় হাজার ৮০০ টাকা খরচ কমেছে এমডির পেছনে।
ব্যাংকগুলোর এমডির পেছনে খরচ কমার চিত্র-
ব্যাংকের নাম |
এমডিরা টাকা নিয়েছেন |
টাকা নেয়ার পরিমাণ বেড়েছে |
|
২০২০ (এপ্রিল-জুন) |
২০১৯ (এপ্রিল-জুন) |
||
ব্র্যাক ব্যাংক |
৪৫,৭৫,০০০ |
৫৫,৭৫,০০০ |
১০,০০,০০০ |
সিটি ব্যাংক |
৪০,৭২,২৬২ |
৪৮,০৪,১৭৪ |
৭,৩১,৯১২ |
ঢাকা ব্যাংক |
২৯,০০,০০০ |
৫১,৫০,০০০ |
২২,৫০,০০০ |
এক্সিম ব্যাংক |
৫৫,২০,০০০ |
৫৭,৪৪,৬৫০ |
২,২৪,৬৫০ |
যমুনা ব্যাংক |
৩৭,০০,০০০ |
৩৭,৮০,০০০ |
৮০,০০০ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক |
৫৯,৮৯,৫১৭ |
৭৫,১১,২১০ |
১৫,২১,৬৯৩ |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক |
৬৫,২৭,০৭৫ |
৭১,০৮,৩৩৩ |
৫,৫১,২৫৮ |
ন্যাশনাল ব্যাংক |
২৫,৩৫,০০০ |
২৮,৩৫,০০০ |
৩,০০,০০০ |
সাউথইস্ট ব্যাংক |
২৬,৮৫,৫০০ |
৩৬,৮৫,৫০০ |
১০,০০,০০০ |
ট্রাস্ট ব্যাংক |
৩৭,৭২,৯৫০ |
৩৮,৭৯,৭৫০ |
১,০৬,৮০০ |
যোগাযোগ করা হলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখার জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে আমরা খরচ কমানোর কোনো উদ্যোগ নেইনি। কোনো ব্যাংকের খরচ কমলে কী কারণে কমেছে, সেটা তারাই বলতে পারবেন।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে খরচ কমেছে, এটা বলা যাবে না। বিভিন্ন কারণে খরচ কমতে পারে। ব্যাংকের এমডি পরিবর্তন হওয়ার কারণে বা অন্য কোনো কারণে এই খরচ কমতে পারে। গত বছরের এপ্রিল-জুনে আমি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ছিলাম না, অন্য একজন ছিলেন। তার বেতন স্কেল এবং আমার বেতন স্কেলের মধ্যে পার্থক্য আছে।
এমএএস/এইচএ/এমএআর/জেআইএম