অনেকেই প্রণোদনার সহায়তা পাচ্ছেন না, ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ
মহামারি করোনার জন্য ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ সরকার পাঠালো তার বড় একটা অংশ যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই সহায়তা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অর্থ সচিব ও গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কোভিড -১৯ মোকাবিলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজের দ্বিতীয় সভা ‘কর্মসৃজন ও গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন’ শীর্ষক সিরিজ মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থ ছিল, অর্থ দিয়েছি। যদি কোন ব্যাংক কথা বা আইন না মানে তাহলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রণোদনার পর প্রণোদনা এটা সঠিক মাধ্যম নয়। এ জন্য প্রণোদনা ভর্তুকি কমিয়ে যদি পলিসি সার্পোট বেশি দেই ও সংস্কার করি তাহলে আমাদের রিটার্ন বেশি হবে। আমাদের উদারতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রণোদনার অর্থ আমরা পাঠাচ্ছি কিন্তু তার বড় একটা অংশ যাচ্ছে না। কারণ আমাদের চ্যানেলটা ব্যাংকিং। আমি কাউকে দোষ দেব না, এখানে অর্থ সচিব ও গভর্নর আছেন ব্যাংকগুলো থেকে অনেকেই সহায়তা পাননি। কেন এটা হলো? আমাদের অর্থ ছিল, অর্থ দিয়েছি। আজকে এখানে অর্থ খাতের দুই প্রধান ব্যক্তি এখানে আছেন। আইন মানতে তারা বাধ্য, আইন আইনই তা অসম্মান করা যাবে না। তাহলে কী করতে হবে? আমাদের তথ্য হলো কেউ কেউ আইন মানছেন না। যদি কোন ব্যাংক আপনার কথা না মানে তাহলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে পারেন। কারণ আমরা সবাই একই পথের যাত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কৌশলের মূল বার্তাটি হচ্ছে সাবলম্বী করা। আমাদের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু কাজ করতে হবে আমাদের। আমাদের সবাইকে সার্বিকভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হলো মিস টার্গেটিং। এর ফলে আমরা সার্বিকভাবে রিটার্ন কম পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এই জায়গাটা ঠিক করতে পারছেন না। আমাদের এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের এসএমই খাতে টাকা যাচ্ছে না কিন্তু কেন? কারণ অধিকাংশ উদ্যোক্তার ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, তারা পারিবারিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে। তারা ব্যাংকে যায় না আসেও না। তাদের ব্যাংকের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে প্রণোদনা কাজে আসবে না। কারণ মানুষ টাকা চায় বা লাগে। কিন্তু সেখানে আমরা প্রণোদনা যাই হোক দিচ্ছি। তার যদি শক্তি না থাকে প্রণোদনা-ভর্তুকি দিয়ে লাভ হবে না। এজন্য প্রণোদনা ভর্তুকি কমিয়ে যদি পলিসি সার্পোট বেশি দেই ও সংস্কার করি তাহলে আমাদের রিটার্ন বেশি হবে। কিন্তু প্রতিনিয়ত প্রণোদনার পর প্রণোদনা এটা সঠিক মাধ্যম নয়। এজন্য আমাদের সংস্কার ও উদারতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও টেকনোলজিস নিয়ে ভাবতে হবে।
এম এ মান্নান বলেন, গত কয়েক বছর আমাদের অর্থনীতিতে সফল্য অর্জিত হয়েছে। আমরা যে কৌশলে সাফল্য অর্জন করেছি সেটা হলো প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনায়। আমরা আমাদের অর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছি। ফলে করোনাকালেও আমাদের অর্থনীতি ও অর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক উপকার হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকেই আশঙ্কা করেছিল যে কোভিডে আমাদের অবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে খারাপ হবে। কিন্তু আমরা ভালো লড়াই করেছি। ফলে অতি তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়েছি।
তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবিলায় আমাদের অর্জিত সক্ষমতা ও জনগণের ঐক্য থাকলে করোনা মোকাবিলা করতে পারব। তবে আমরা সার্বিকভাবে উৎরে যাব বা গেছি সেটা বলব না। খুঁটিনাটি কিছু ব্যর্থতা ছিল। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নয়ই। তবে ব্যর্থতার কারণ নিয়ে আমরা খোঁজ নেবে, দেখব কিন্তু অর্জনটাকে আমরা ফেলে দেব না।
রেমিট্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের করোনাকালেও রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। এটা কেন বেড়েছে সেই কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের দুই শতাংশ প্রণোদনা ও ডিজিটাইলাজেশনের কারণে হয়েছে, এর বাইরে আর কি আছে সেটা বের করতে হবে। আর এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
সভায় কী-নোট পেপার উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম প্রমুখ।
আইএইচআর/জেএইচ/এমকেএইচ