টপার বিজয়ের প্রেরণায় লকডাউনের গল্প

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৭ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২১

টপার বিজয়ের প্রেরণায় ক্যাম্পেইনের আওতায় লকডাউনের গল্প বলার আহ্বানে আমরা সারাদেশ থেকে প্রচুর গল্প পেয়েছি। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপনারা জানিয়েছেন আপনাদের মনের অপ্রকাশিত সব অভিব্যক্তি। জানিয়েছেন করোনাকালে ঘটে যাওয়া আপনাদের জীবনের নানা উত্থান-পতনের গল্প। গল্প বললে বরং ভুল হয়ে যায়; বলতে হবে, লকডাউনের জীবনপঞ্জি।

নানারকম অনিশ্চয়তার মোড়কে মোড়ানো লকডাউনের মর্মস্পর্শী ঘটনাগুলো পড়তে গিয়ে আমরা বারবার হোঁচট খেয়েছি। মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া এমন বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো আমাদের বিবেকবোধকে নাড়া দিয়েছে চরমভাবে। সেখান থেকে বাছাই করা দুটো জীবনের কথা তুলে ধরা হলো এখানে।

আয়েশা আনহা, ঢাকা

আপন কিংবা পর যেই মারা যেত বিদায়ের শেষ মুহূর্তে কখনোই লাশ দেখতাম না, খুব ভয় পেতাম। মানসিকভাবে আতঙ্কে কাটতো আমার সময়গুলো। আর সেই আমি লাশের পাশ দিয়ে দৌড়ে পাঁচ তলায় নামছি আর উঠছি পাঁচ মিনিট পর পর মৃত্যুর সংবাদ কানে আসছে। প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণা!

তিন দিন পার হবার পরও লাশ নিতে আসেনি কেউ!
কি অদ্ভুত এক অবস্থায় কাটিয়েছিলাম জীবনের ৩টা দিন।

হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার পাঁচ ঘণ্টা পর জানতে পারলাম পাশের তিনটা কেবিনেই করোনা আক্রান্ত রোগী এবং আমি করোনা ওয়ার্ডে আছি। ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। সেই মুহূর্তে আমি ধরেই নিয়েছি তাহলে আমিও অ্যাফেক্টেড হয়েছি এবং এই অবস্থায় বাসায় যাওয়া কি ঠিক হবে? খুব হীনমন্যতায় ভুগছিলাম।

পুরো লকডাউনে আনন্দের দিন যেমন ছিল, ঠিক কষ্টগুলো ছিল সেই সমপরিমাণ। চাকরিটাও তখন ছন্নছাড়া। সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়ে রাত ৮টায় বাড়ি ফিরতাম সেই আমি একদম বাসায় বসা মানতে পারছিলাম না।

মহিউদ্দিন ভূঁইয়া, কুমিল্লা

আমি ১৯৭১ সালের যুদ্ধ দেখিনি; তবে আমি করোনার যুদ্ধ খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি।

করোনার জন্য যখন ২০২০-এর মার্চ মাসে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হলো ঠিক তখনই আমাকে আমার পুরনো মেস ছেড়ে এপ্রিলের এক তারিখ থেকে নতুন মেসে উঠতে হলো। নতুন মেস, নতুন পরিবেশ। তবে এই করোনার আতঙ্কের মধ্যেও নতুন মেস মেম্বাররা আমাকে সাদরে গ্রহণ করে নিলেন। তবে ঝামেলা শুরু হলো উঠার পর থেকে।

আমি একটা প্রাইভেট জব করি। আমাকে এই লকডাউনের মধ্যেও সপ্তাহে ৩-৪ দিন অফিস করতে হতো। বাড়ির মালিক আর মেস মেম্বাররা এতে বাধ সাধলেন; লকডাউনের মধ্যে করোনার ঝুঁকি নিয়ে বাসা থেকে বাইরে গিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসা যাবে না। তাই শেষমেশ বাধ্য হয়ে দেশের বাড়ি কুমিল্লায় চলে গেলাম। সেখানে গিয়েও দেখি একই অবস্থা। আমার বাসায় আসার ব্যাপারটা দেখে সবাই খুশি হবার পরিবর্তে মনে হলো অখুশি হয়েছে। কিন্তু এই করোনার মধ্যে তো আর কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সেখানেই থাকতে হলো। কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসে আমি আমার অফিসের কাজ করেছি সপ্তাহে ৩-৪ দিন।

এরপর ঈদের ছুটি শুরু হলো। ছুটির আগের দিন অফিস শেষ করে বাসায় এলাম। রাতের বেলায় প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হলো। পরের দিন সকালে ১০২ ডিগ্রি জ্বর আর সমস্ত শরীর ব্যথা। জ্বর উঠছে আর ছাড়ছে। এরকম অবস্থায় নিজের অসুস্থতার কথা পরিবারের কারোর কাছে বলতে পারছিলাম না। তখন খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো কি করবো। নিজের জন্য পরিবারের সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারব না। এরমধ্যেই আমার শরীরে করোনার সব উপসর্গ প্রকাশ পেল। বুঝতে আর বাকি নেই যে আমি করোনা আক্রান্ত। তখন বাসা ছেড়ে যাবারও কোনো উপায় ছিল না। এরমধ্যে আমি একটা আলাদা রুমে আইসোলেশনে ছিলাম। পাশের রুমে থাকা বাবাকে ফোন দিলাম। সবকিছু খুলে বলতেই বাবা বললেন, দুশ্চিন্তা না করতে। নিজের রুমেই আইসোলেটেড থাকতে। আল্লাহ ভরসা।

এরমধ্যে আমার প্রচুর কাশি এবং একটু শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। কাশিটা এতটাই ভয়ানক ছিল, বারবার মনে হতো এই বুঝি কাশি দিতে দিতেই মারা যাব। তখন সারাক্ষণ গরম পানির ভাপ নিচ্ছিলাম। আর আমার এক ডাক্তার বন্ধুর পরামর্শ মতো ওষুধ নিচ্ছিলাম। এই বিপদের সময়ে আমি আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছে পেয়েছি। তাদের সহযোগিতায় আর আল্লাহর অশেষ কৃপায় অবশেষে সুস্থ হয়েছি; নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। এই সময়ে ফ্যামিলির লোকজনের পাশাপাশি আমার অফিসের বস, কিছু বন্ধু আর আত্মীয়-স্বজন আমাকে সারাক্ষণ মানসিকভাবে সাপোর্ট করেছেন। সকলের নিকট আমি কৃতজ্ঞ।

এআরএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।