কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ‘অর্থনৈতিক বৈষম্যে’

মহামারির মধ্যেও ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে। কোভিড-১৯ সময়ে ব্যাংকিং খাতে নতুন ১০ হাজার ৫১টি কোটিপতির ব্যাংক হিসাব যোগ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৯ সাল শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত জমা থাকা হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে।
অন্যদিকে, কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়ে যাওয়াকে ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে উল্লিখিত ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। যা ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, ২০১৯ সাল শেষে কোটিপতি হিসাবগুলোতে মোট ৫ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা জমা ছিল যা ওই সময়ের মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সেই হিসাবে গত এক বছরে কোটিপতি হিসাবগুলোতে আমানত বেড়েছে ৬৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।
২০২০ শেষে ব্যাংকগুলোতে খোলা মোট হিসাব সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৫৮ লাখ ১২ হাজার ৯৬৬টি। কোটি টাকার বেশি জমা থাকা ব্যাংক হিসাবের হার শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে কোটিপতি হিসাব বেড়েছিল ১১ শতাংশ বা ৮ হাজার ২৭৬টি। আর ২০১৮ শেষে দেশে ১ কোটির বেশি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৫৬৩।
১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে যা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২ জন, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩ জন ছিল এবং ২০০৯ সালের মার্চে শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ জন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি অর্থনৈতিক বৈষম্য। বর্তমান পরিস্থিতিতেও কোটিপতির সম্পদ ও আয় বেড়েছে অন্যদিকে ব্যয় কমেছে। তাদের তাদের সম্পদ ও আয় দুটোই বাড়ছে। তাছাড়া বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো লোকসানে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবার আপৎকালীন সময়ের জন্য ব্যাংকে টাকা রাখা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে নতুন কোনো বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন। এসব কারণে কোটি টাকার আমানত বেড়েছে।’
ইএআর/এসএস/জেআইএম