করোনায় মন্দের ভালো কুরিয়ার-ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাসের প্রকোপে অনেক ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে গত বছরের প্রথমদিকে দেশে লকডাউন শুরু হয়ে মাঝে কয়েকমাস কিছুটা শিথিল থাকলেও এখন আবারও কড়াকড়ি চলছে। এর জেরে অধিকাংশ ব্যবসায় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা হিমসিম খাচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও মন্দের ভালো যাচ্ছে কুরিয়ার আর ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় সবকিছু বন্ধ থাকলেও কুরিয়ার, ট্রান্সপোর্ট, জরুরি পণ্য পরিবহন এর আওতাবহির্ভূত রয়েছে। অন্যদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছোট থেকে বড় সব ধরনের মালামাল পরিবহনে এসব সেবার কোনো বিকল্প নেই। তাই অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় এখন এসব ব্যবসা ভালো চলছে।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) কাকরাইলে এসএ পরিবহনের সামনে কথা হয় নওগাঁর রিয়াজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সেখানে তিনি তার দোকানের মালামাল বুকিং শেষে বলেন, ‘এক কার্টনে মোবাইল মেরামতের কিছু যন্ত্রাংশ বুকিং দিলাম। আগে এরকম এক-দুই কার্টন মালামাল বাসে করেই নিয়ে যাওয়া যেত। এখন তো কোনো উপায় নেই কুরিয়ার ছাড়া।’
কুরিয়ার ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা যারা করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলে জানা গেছে, করোনার সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ার কারণে এখন নানা ধরনের অপ্রচলিত পণ্য পরিবহন করছেন তারা। যেগুলো আগে সাধারণত মানুষ নিজের সঙ্গেই বহন করতেন। এ ছাড়াও কম দূরত্বে বিভিন্ন মালামাল কুরিয়ারের মাধ্যমে দেয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে, যা আগে ওইসব কোম্পানি অথবা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে সরবরাহ করতো।
তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর দাবি, গত বছরের লকডাউনের থেকে এ বছর লকডাউনে তাদের ব্যবসা অনেকটাই কমেছে। করতোয়া কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসের মালিক মোজাম্মেল হক লালু জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছরের লকডাউনে ব্যবসা খুব ভালো ছিল। ওই সময় যেখানে ঢাকা থেকে বগুড়া প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কার্গো মালামাল যেত, সেটা এসময় অর্ধেক। কারণ এ দফায় দোকানপাটে বেচাকেনা খুব কম। শঙ্কার কারণে মানুষ মালামাল পরিবহন কমিয়ে দিয়েছে।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৭০টি কুরিয়ার সার্ভিস রয়েছে। যদিও এর মধ্যে সরকার নিবন্ধিত কুরিয়ারের সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫টির মতো। বাঁকিগুলোর কেউ নিবন্ধন নেয়নি। আবার কারও কারও নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যা পরবর্তিতে হালনাগাদ করেনি।
এদিকে জানতে চাইলে কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান পুলক বলেন, ‘দুটি করণে করোনা পরিস্থিতিতেও কুরিয়ার ব্যবসা টিকে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি জরুরি সেবার আওতায় হওয়াতে ব্যবসা পরিচালনায় খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, বাসাবাড়ি থেকে পার্সেল গ্রহণের একটি ব্যবস্থা আমরা করেছি, যাতে প্রচুর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ই-কমার্স যারা করছে, তারা ভালো রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছোট কুরিয়ার যাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই, তারা বেশি সমস্যায় পড়েছে। যদিও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ছোট কুরিয়ারগুলোর পণ্য বড় কুরিয়াররা বিশেষ ছাড়ে পরিবহন করে দিচ্ছে। সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও তাদের বাড়তি পরিবহন ব্যয় হচ্ছে। সুবিধা করতে পারছে না।’
রাজধানীর গুলিস্থান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বিভন্ন এলাকায় ছোট ছোট কুরিয়ার ও টান্সপোর্টের অফিস রয়েছে। যাদের অনেকেরই নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই। তারা কয়েকজন সমন্বয় করে অথবা বিভিন্ন গণপরিবহনে পণ্য পরিবরহন করতো। তারা এখন বেশ বেকায়দায় রয়েছে বলে কথা বলে জানা গেছে।
চকবাজারে রমনা টান্সপোর্ট এজেন্সির ব্যবস্থাপক শফিকুল আলম বলেন, ‘পণ্যের দোকান খোলা থাকলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসতে পারছেন না। এ কারণে সরাসরি বুকিং আগের থেকে কমেছে। তবে যারা নিয়মিত পণ্য পরিবহন করেন, তারা নানাভাবে পণ্য অনা নেয়া করছেন। নিয়মিত গ্রাহকের বুকিং আগের মতো রয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যবসা কিছুটা কমলেও খুব বেশি খারাপ নয় ‘
তিনি আরও বলেন, ‘জরুরি পরিবহন ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানেই এখন পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক বুকিং ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
এনএইচ/ইএ