বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বসেছে বাজেট অধিবেশন। গত বছরের মতো এবারও চলমান মহামারির বিষয়টি মাথায় রেখেই পুরো বছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাজানো হবে। সে অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের মতো এবারও বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে বাজেটে কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে বিরাজমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক কর হার দেশের বাণিজ্যের প্রসার ও শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যাশা পূরণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালের অর্থ আইনে কর্পোরেট কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছিল।
২০২১-২২ অর্থবছরে কর্পোরেট কর হার আরও কমিয়ে নন-লিস্টেড কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে কর হার ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ এবং লিস্টেড কোম্পানির জন্য তা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আর এক ব্যক্তি কোম্পানির জন্য নন-লিস্টেড কোম্পানির কর হার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রযোজ্য। অর্থনীতিকে অধিকতর আনুষ্ঠানিক করা এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) দুপুর ৩টায় বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় তিনি কর্পোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করেন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকার রাজস্ব আদায়ে একটি করদাতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব দর্শনের সূচনা করেছে। এই দর্শনের ভিত্তি হচ্ছে করদাতাদের ওপর ক্রমান্বয়ে করের বোঝা কমিয়ে অর্থনীতিতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল মাত্র ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা; যা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। নারী করদাতা, সিনিয়র করদাতা, প্রতিবন্ধী করদাতা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত এই আয়ের সীমা আরও বেশি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্টক মার্কেটে নন-লিস্টেড কোম্পানির কর হার ছিল ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ; যা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে।
‘এছাড়া, এই নীতির আলোকে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত স্টক মার্কেটে লিস্টেড কোম্পানি এবং ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশে আনা হয়েছে। সরকারের এই যুগোপযোগী নীতির কারণে করদাতাদের যেমন স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে, তেমনি দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পরিমাণও বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত হলো ২৩ শতাংশ। সরকার এই অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কর্পোরেট কর হার কমিয়ে আনলে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হতে পারে। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং কোভিড ১৯ চলমান পরিস্থিতিতে তাই বাংলাদেশেও কর হার পুনঃনির্ধারণ করা সময়ের দাবি।’
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত কর্পোরেট কর হার:
পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি ২২.৫ শতাংশ, পাবলিক ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানি ৩০ শতাংশ, এক ব্যক্তি কোম্পানি ২৫ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড-ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩৭.৫ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংক ৩৭.৫ শতাংশ, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি ৪৫ শতাংশ (+২.৫ শতাংশ সারচার্জ), পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন কোম্পানি ৪০ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন মোবাইল ফোন কোম্পানি ৪৫ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ৩৭.৫ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ, ব্যক্তিসংঘের করহার ৩০ শতাংশ, কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ও অন্যান্য করযোগ্য সত্তার ব্যবহার ৩০ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবলমাত্র তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের ১৫ শতাংশ করহার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইএইচআর/এসএস/এমকেএইচ