গতি ফিরছে শেয়ারবাজারে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

লেনদেন খরা আর টানা দরপতনে শেয়ারবাজারে যে অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে বেরিয়ে আসার আভাস মিলছে। লেনদেনের গতি বাড়ার পাশাপাশি বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের (সর্বনিম্ন দাম) ওপরে উঠে এসেছে। এতে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের দেখা মিলেছে।

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এতে দুই মাসের বেশি সময় পর ডিএসইতে ৯০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিলেছে।

শেয়ারবাজারে এই গতি ফেরার আভাস পাওয়া যায় চলতি সপ্তাহের শুরুতেই। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সবকয়টি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে প্রায় দুই মাস পর সাতশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। পরের কার্যদিবস সোমবার সূচক কিছুটা কমলেও লেনদেন সাতশ কোটি টাকার ওপরে থাকে।

আরও পড়ুন: লেনদেনের গতি বেড়েছে শেয়ারবাজারে

আর তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার এসে লেনদেন নয়শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলো। শেয়ারবাজারে গতি ফিরে আসার কারণ হিসেবে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছুদিন আগে শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। যে কারণে লেনদেন কমে দুইশ কোটি টাকার নিচে নামে যায়। এখন সেই বড় বিনিয়োগকারীরা আবার শেয়ারবাজারে সক্রিয় হয়েছেন। ফলে বেড়েছে লেনদেনের গতি।

তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচক বাড়ছে, এটা ভালো লক্ষণ। গত কয়েকদিনের লেনদেনের চিত্র দেখলেই বোঝা যাচ্ছে বাজারে নতুন টাকা আসছে। তাছাড়া অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। এখন কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে এসেছে। আশাকরা যায় সামনে আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে আসবে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেন সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে দাম বাড়ার তালিকা। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে সবকয়টি সূচকের বড় উত্থান দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন।

আরও পড়ুন: সূচকের পতন, বেড়েছে লেনদেন

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১১৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৮টির। আর ১৮৬টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়েছে ২ হাজার ২১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯০০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৭১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত বছরের ৯ নভেম্বরের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। গত বছরের ৯ নভেম্বর ডিএসইতে এক হাজার ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর আর হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: সূচকের বড় উত্থান, ৭০০ কোটি ছাড়ালো লেনদেন

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের ৫২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বসুন্ধরা পেপার, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, নাভানা ফার্মা, জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট মেনুফ্যাকচারিং, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, ইস্টার্ন হাউজিং এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৭টির এবং ১০৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণত বছরের শেষদিকে শেয়ারবাজারে একটু বিক্রির চাপ থাকে। এ কারণ হয় তো বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত ছিলেন। যে কারণে কিছুদিন আগে আমরা লেনদেনের গতি কমে যেতে দেখেছিলাম।

তিনি বলেন, কয়েকদিনের বাজার চিত্র দেখা বোঝা যাচ্ছে বাজারে সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তাছাড়া বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। এতে লেনদেনের গতি বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচক বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে এসেছে। আমাদের ধারণা সামনে বাজার পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারের বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন সম্প্রতি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ওইসব বিনিয়োগকারী এখন শেয়ারবাজারে আবার সক্রিয় হয়েছেন। প্রতিনিয়ত তারা লেনদেন করছেন। যে কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বড় অঙ্কের লেনদেন হচ্ছে। এই বিনিয়োগকারীরা যদি এভাবে সক্রিয় থাকেন তাহলে শিগগির বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে।

এমএএস/কেএসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।