এখনই জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি গণমাধ্যম প্রধানদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫৯ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৩
ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় এখনই দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধানরা।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ অভিমত দেন। অনলাইফ প্ল্যাটফর্ম জুমে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধানরা বলেন, এখনই দেশে তেল ও গ্যাসের দাম কমানো উচিত। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ব্যাংকের বড় ঋণ গ্রহীতাদের ঢালাও ছাড় দেওয়ার বিষয়েও সমালোচনা করেন গণমাধ্যম প্রধানরা। তারা বলেন, ব্যাংকের বড় ঋণ গ্রাহীতাদের কেন এতো ঢালাও ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসব ঢালাও ঋণ সুবিধার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ জুম প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নেন।

এ সময় অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহম্মদ আহসানুউল্লাহ গত অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় দেওয়া মিডিয়া প্রধানদের সুপারিশ বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরেন।

আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, কীভাবে সরকার সম্পদ অর্জন করবে, তার একটা রোডম্যাপ থাকতে হবে। সম্পদ আয় করে তা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে পারবে সরকার। বর্তমানে করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সরকার খরচের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন করে যাচ্ছে। এ জন্য সরকারের খরচ কমাতে হচ্ছে। তবে এ অবস্থা তো সবসময় থাকবে না।

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে আসছে। তাই দেশের জ্বালানি তেলের মূল্য এখন বিবেচনার দাবি রাখে। তেলের দামটা একটু কমিয়ে দিলে অর্থনীতিতে এটা বেশ ভালো প্রভাব ফেলবে। যখন দুইবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় তখন প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ১১০ ডলার, এখন তা কমে ৭২ থেকে ৭৩ ডলারে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, বড় বড় ঋণ গ্রহীতারা অনেক ধরনের ব্যাংকের বিশেষ ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন। এসব সুবিধা আর কতদিন দেওয়া হবে? বড় খেলাপিদের ঋণ রিশিডিউলের সুবিধা দেওয়ার ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে।

শামসুল হক জাহিদ আরও বলেন, পত্রিকায় দেখেছি আগামী বাজেট হবে ৭ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার। এত বড় বাজেটে রেভিনিউ আসবে কোথা থেকে, এর একটা বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আগামী বাজেটে ভর্তুকি আর সুদের বরাদ্দ বাবদ যে টাকা রাখা হবে তা যেন যৌক্তিক হয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এ পর্যন্ত ব্যাংকে যেসব টাকা আটকে গেছে সেগুলো কীভাবে উদ্ধার করা যায় এবং মানি লন্ডারিং হয়ে যেসব টাকা চলে গেছে, সেই টাকা কীভাবে ফেরত আনা যায় সে বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি বের করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের সংবাদপত্রকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সরকারের সব ধরনের সুবিধা দিতে হবে, এটা সেবা খাত। পোশাক খাতের রপ্তানি থেকে আমাদের ট্যাক্স, আমদানি কর বেশি দিতে হচ্ছে। এটা কমাতে হবে। বিজ্ঞাপন বিলের ওপর ৪ শতাংশ ট্যাক্স কমাতে হবে। দেশীয় নিউজপ্রিন্টের ওপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স কেন নিতে হবে! দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে হবে। এখন বিজ্ঞাপন গুগলে চলে যাচ্ছে।

নঈম নিজাম আরও বলেন, ব্যাংকের বিশাল অনিয়মগুলো নিয়ে জনগণ এক ধরনের আতঙ্কে আছে। কিন্তু ব্যাংক বা অন্য কর্তৃপক্ষ থেকে এই ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা বা চিত্র কখনো দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক খাত কী অবস্থায় আছে এবং সেটা আসলে কতটুকু আমরা কার্যকরী করতে পারবো এ বিষয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া উচিত।

আমাদের নতুন অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বলেন, দেশীয় নিউজপ্রিন্টের প্রতি টনের দাম এখন ৯৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। গত বছর এর দাম ছিল ৩৫ হাজার টাকা। দেশীয় নিউজপ্রিন্টের দাম এতো বাড়লো কেন? এটা সরকারকে অনুসন্ধান করতে হবে। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। এরা কি সরকারের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে? বাজেটে এ নিয়ে ব্যাখ্যা থাকতে হবে। এছাড়া পিপলস লিজিং কোম্পানিকে বাঁচাতে সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।

চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি অনেকটা টিকে আছে কৃষির ওপরে। কৃষিতে বরাদ্দ অনেক বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কৃষি গবেষণা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষিপণ্য সহজলভ্য করা, কৃষি বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষির উপখাত পোলট্রি ও খামার, ফিসারিজসহ প্রাণিসম্পদে খাদ্য ব্যয় দুই গুণের বেশি হয়ে গেছে। এতে আমাদের ৩০০ টাকায় ব্রয়লার খেতে হচ্ছে। এই প্রাণি খাদ্যের দাম কমাতে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে। তবে কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য দাতাগোষ্ঠী বারবার চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, অর্থ সচিব আগামী বাজেট ঘোষণায় ব্যাংকের পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো এনজিও’র মাধ্যমে আর কৃষিঋণ দিতে পারবে না। কোনো ব্যাংক কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে সেই ঋণের টাকা আমরা গবেষণা, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে ব্যয় করবো।

এমএএস/কেএসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।