চকবাজারে দুপুর থেকে ইফতারির পসরা, দাম চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৩

পবিত্র রমজানের প্রথম দিনেই পুরান ঢাকার চকবাজারে বাহারি ইফতারসামগ্রী কিনতে ভিড় করছে মানুষ। শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুর থেকে চকবাজারের শাহী জামে মসজিদের সামনে চক-সার্কুলার সড়কে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। ব্যবসায়ীরা জানান, ইফতারের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে, বিক্রিও বাড়বে।

তবে গত বছরের চেয়ে এবার ইফতারসামাগ্রীর দাম বেশি বলছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারাও তা স্বীকার করেছেন। তাদের দাবি- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার প্রায় সব ইফতারসামগ্রীর দামই কিছুটা বেশি।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) দুপুর আড়াইটা থেকে সোয়া ৩টা পর্যন্ত চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে আগ্রহ থাকে রোজাদারদের। পুরান ঢাকার চকবাজারের বাহারি ইফতারিতে সবারই আলাদা আগ্রহ থাকে। এজন্য ইফতারসামগ্রী কিনতে চকবাজারে ভিড় করেন ক্রেতারা।

সরেজমিন চকবাজারে দেখা গেছে, চক-সার্কুলার সড়কে প্রথম দিনে সারি সারি শতাধিক ইফতারসামাগ্রীর দোকান বসানো হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশই অস্থায়ী দোকান। দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে সুতি কাবাব, জালি কাবাব, মুঠি জালি কাবাব, নারগিস চাপ, টিকা কাবাব, শাহী জিলাপি ও বোম্বে জিলাপি, ডিম চপ, রোস্ট, দই, বড়া, হালিম, নুরানি লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, পরোটা, ছোলা, পিঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ফালুদাসহ নানা ধরনের খাবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর চিকেন ফ্রাইয়ের দাম ছিল ৮০ টাকা। এ বছর সেটার দাম হয়েছে ১২০ টাকা। ১৮০ টাকার চিকেন স্টিক এবার বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাহী জিলাপি গত বছর যেখানে ২৮০-৩০০ টাকা কেজি ছিল, এ বছর সেটা হয়েছে ৩৫০ টাকা।

দাম বেড়েছে অন্য সব ধরনের ইফতারিরও। গত বছরের ৭০ টাকার হালিম এবার হয়েছে ৮০ টাকা। চিকেন পরোটা, চিকেন চাপের দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। ১০০ টাকার দই বড়া হয়েছে ১২০ টাকা।

চকবাজার শাহী জামে মসজিদের সামনে চক-সার্কুলার রোডে অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসেছেন মো. খোকন মিয়া। তিনি বলেন, ‘৪০-৪৫ বছর ধরে এখানে ইফতারি বিক্রি করি। এটা আমাদের ঐতিহ্য। শখের বশেও অনেকে ইফতার বিক্রি করেন। আসলে এটা শুধু ব্যবসা নয়, অন্যরকম ভালো লাগাও। প্রথম দিনেই অনেক মানুষ এসেছেন। বেচাকেনাও ভালো চলছে। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলে বিক্রি আরও বাড়বে।’

মাহারুফ নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘জুমার নামাজের পরেই দোকান নিয়ে বসেছি। বেচাকেনা প্রথম দিনে কিছুটা হচ্ছে। সবকিছুর দাম অবশ্য আগের বছরের তুলনায় একটু বেশি। এজন্য ক্রেতারা দাম নিয়ে নানা কথা বলছেন।’

শাহী জিলাপির বিক্রেতা জনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘তেল, ময়দা, চিনি, গ্যাসসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। শাহী জিলাপিসহ সব ইফতারি তৈরিতেই খরচ বেড়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় সবগুলোর দাম কিছুটা বেশি।’

ব্যবসায়ী রানা বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের কাবাব বিক্রি করছি। গত বছরের তুলনায় দাম এবার একটু বেশি। প্রথম দিনে ক্রেতা ভালোই আসছেন। ক্রেতার সংখ্যা সামনে আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

এদিকে, রোজার প্রথম দিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেকেই পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার ইফতারির বাজারে এসেছেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন ক্রেতারা।

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম সাদিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘চকবাজারে ইফতার কিনতে প্রথমবার এলাম। বেশ ভালো লাগছে। খুব সুন্দর করে নানান ধরনের ইফতারসামগ্রী সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। দেখতেই অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। পুরোটা ঘুরে দেখবো। তারপর পছন্দ মতো ইফতারসামগ্রী কিনবো।’

জান্নাতুল মোবাশ্বিরা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘চকবাজারের ইফতারির অনেক সুনাম শুনেছি। আজ প্রথমবার এখানে আসলাম। ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে নানান ধরনের ইফতারসামগ্রী দেখছি। বিক্রেতাদের কাছ থেকে খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে নিচ্ছি। পাশাপাশি দামও জিজ্ঞেস করছি। পরে পছন্দ অনুযায়ী কিনে নিয়ে যাবো।’

সাইফুল আলম নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘চকবাজারে ইফতার কেনার আলাদা একটা বিষয় থাকে। তাই আসলাম। তবে সবকিছুর দাম বাড়ায় এবার ইফতারির দামও বেশি।’

পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাতুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম দিনেই ইফতার কিনতে আসলাম। এ বছর দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। সবগুলো দোকান ঘুরে যাচাই করে দেখি, তারপর কিনবো।’

আরএসএম/এএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।