বিবিএসের জরিপ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাথাপিছু ব্যয় ৫৫৮ টাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৮ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০২৩

দেশে বিদ্যমান ৩২৮টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশনে ধারাবাহিকভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে। এ শহরগুলোতে এখন মোট ৪ কোটি ৫ লাখ জনসংখ্যার বসবাস। শহরগুলোর জন্য মানুষের দৈনন্দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরই এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে এ পৌর ও সিটি শহরগুলোকে। ২০২১ সালে ৩৪০টি শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রতি নাগরিকের পেছনে শহরগুলোকে ব্যয় করতে হয়েছে গড়ে ৫৫৮ টাকা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘মিউনিসিপ্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট জরিপ ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিবিএস জরিপে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ শহরগুলোতে ৩ কোটি ৭৯ লাখ মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শহরগুলোতে ২০২০-২১ অর্থবছরে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫ লাখে। ৩৪০টি শহরের মোট আয়তন এখন ৬ হাজার ৮২৪ বর্গ কিলোমিটার, যদিও আগের বছরগুলোতে শহরগুলোর মোট আয়তন কত ছিল তা উঠে আসেনি।

জরিপে বলা হয়েছে, ৩৪০ পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে মোট জনবল রয়েছে ২০ হাজার ১০৫ জন, এর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থায়ী কর্মী রয়েছেন ৩৮ শতাংশ।

সরকারি ব্যয়ের শতাংশ হিসাবে পৌর ব্যয় বেড়েছে শহরগুলোতে। এতে দেখা যায়, ৩৪০টি মিউনিসিপ্যালিটি (১২টি সিটি করপোরেশন এবং ৩২৮টি পৌরসভা) মোট সরকারি ব্যয়ের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ ব্যয় করেছে।

২০১৮-১৯ এবং ২০২০-২১ সালে সরকারি ব্যয়ের শতাংশ হিসাবে ‘এ’-শ্রেণির পৌরসভাগুলোর ব্যয় ছিল সর্বাধিক। অপরদিকে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিটি করপোরেশনগুলোর ব্যয় সরকারি ব্যয়ের শতাংশ হিসাবে সর্বাধিক।

পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়
জরিপে বলা হয়েছে, ৩৪০টি মিউনিসিপ্যালিটি তিন বছরে শুধু বর্জ্যের পেছনে ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শহরগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় ছিল ১ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের ব্যয় ছিল ২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। জরিপে বলা হয়েছে, এটি বছরের পর বছর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখায়।

মাথাপিছু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়
৩৪০টি মিউনিসিপ্যালিটির বিপরীতে মাথাপিছু সার্বিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ২০১৮- ১৯ সালে ৪৯৪ টাকা, ২০১৯-২০ সালে ৫৩৯ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৫৮ টাকা। অর্থাৎ ২০১৮-১৯ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত, মাথাপিছু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গড় ব্যয় ১৩ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়েছে।

ল্যান্ডফিল অপারেশন ব্যয়
২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতি মেট্রিক টন বর্জ্যের গড় ল্যান্ডফিল অপারেশন ব্যয় ছিল ২ হাজার ৯৮৬ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৩৭ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৪৯ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ এ ল্যান্ডফিল অপারেশন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে কিছুটা কমেছে। এক্ষেত্রে, সামগ্রিক প্রবণতা ল্যান্ডফিল অপারেশনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় দেখায়।

পৌর কঠিন বর্জ্যের উৎপাদন
১২টি সিটি করপোরেশন এবং ৩২৮টি পৌরসভায় ২০১৮- ১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে যথাক্রমে ৮০ লাখ ৩ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন, ৭১ লাখ ৯৯ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন এবং ৭৪ হাজার ১৩৮৩৯ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে মাথাপিছু দৈনিক বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫৮ কিলোগ্রাম। ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ উভয় অর্থবছরে, দৈনিক মাথাপিছু বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫০ কিলোগ্রাম।

দৈনিক প্রতি বর্গকিলোমিটারে পৌর কঠিন বর্জ্যের উৎপাদন
৩৪০টি মিউনিসিপ্যালিটি একত্রে বিবেচনায় নিলে ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ সালে প্রতিদিন প্রতি বর্গকিলোমিটারে উৎপন্ন কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ যথাক্রমে ৩ দশমিক ২১ মেট্রিক টন, ২ দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন ও ২ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন।

সংগৃহীত পৌর কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ
সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো একত্রে ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদিত মোট কঠিন বর্জ্যের মধ্যে গড়ে যথাক্রমে ৭৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, ৭৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও ৭৯ দশমিক ২২ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। সামগ্রিক বৃহত্তর সুযোগ সুবিধা এবং সক্ষমতার কারণে সিটি করপোরেশনগুলোতে বর্জ্য সংগ্রহের দক্ষতা সর্বাধিক ছিল বলে মত দেওয়া হয়েছে জরিপে।

উৎসভিত্তিক সংগৃহীত কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ
শুধু পরিবারগুলো থেকে বর্জ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি আসে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিবার থেকে বর্জ্য এসেছে মোট বর্জ্যের ৬৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছে ৭১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

তবে শহরগুলোতে শিল্পের বর্জ্যের পরিমাণ কিছুটা কমেছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট কঠিন বর্জ্যরে ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ এসেছিল শিল্প থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ছিল ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ শিল্প বর্জ্য।

সমীক্ষাটি পৌর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুপারিশ চিহ্নিত করে বলেছে জনসচেতনতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ যে কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জনসচেতনতা ও জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতীত, জনগণের বর্জ্য হ্রাস, পুনর্ব্যবহার এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের গুরুত্ব বোঝার সম্ভাবনা কম। এ উপলব্ধি ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এমওএস/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।