ইজারা হবে বিটিএমসির আরও তিন মিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৮ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) বন্ধ আরও তিনটি মিল ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ইজারা সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে ইজারা প্রস্তাব মূল্যায়নে কমিটি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশে মিলগুলোর ইজারা প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মুহাম্মদ মুখলেছুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

ওই তিন কারখানা ইজারা দিতে শিগগির টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবে বিটিএমসি। ইজারার অনুমতি পাওয়া পাটকলগুলো হলো- চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলস, সিলেট টেক্সটাইল মিলস ও কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস।

জানা গেছে, বিটিএমসির মালিকানাধীন ২৫ কারখানাই এখন বন্ধ। বন্ধ থাকা এসব বিটিএমসির কারখানাগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনরায় চালুর জন্য ইজারা দেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিটিএমসির ২৫টি মিলের ৬৩৬ দশমিক ৩৮ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় বিটিএমসির বন্ধ মিল চালুর বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরিপ্রেক্ষিতে নানা উদ্যোগের পর ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড পিপিপি পদ্ধতিতে চালু করা সম্ভব হয়। কিন্তু করোনার সময় নানা আর্থিক সমস্যার কারণে মন্ত্রণালয়ের সে উদ্যোগও ভেস্তে যায়।

সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় চাপ প্রয়োগ করে বিক্রি হওয়া মিল চালুর বিষয়ে সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

বছর ছয়েক আগে লোকসানের কারণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওইসব পাটকল একযোগে বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে সেগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ইজারা নিতে আগ্রহী হলেও ফের সেখানে পাটকল স্থাপনে আগ্রহ কম বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব পাটকল ইজারা নিয়ে সেখানে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে বিজেএমসি। এর আগে চার দফা দরপত্র দিয়েও পাটকল করার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তা পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে টেক্সটাইল মিল করা হচ্ছে।

বেসরকারি পাটকল লাভের মুখ দেখলেও বিজেএমসির পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনছিল। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।

এরপর ইজারা প্রক্রিয়া শুরু করার প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়নের শুরুতে দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের ইজারা নেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। এছাড়া ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু উদ্যোক্তা পাটকলগুলোর ইজারা পেতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সরকারের নানা শর্ত ও মধ্যমেয়াদী ইজারার সময়ের কারণে পরে আগ্রহে ভাটা পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহের কারণ মিলগুলোর দুরবস্থা ও সরকারের নানা শর্তের বেড়াজাল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আ. বারিক।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিজেএমসির সব মিল অত্যন্ত পুরোনো। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা নতুন নতুন মেশিনের এক চতুর্থাংশ। শ্রমিক খরচ কয়েকগুণ। এছাড়া এসব মিলে কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি। তাদের (বিজেএমসির) মেশিনের খবর নেই, লিজ নিয়ে ব্যস্ত তারা।

তিনি বলেন, এ কারখানা নিয়ে ব্যাংক লোন নেওয়া যাবে না, এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না- এমন দুই ডজন শর্ত রয়েছে। যে বিনিয়োগ করবে তারা এত শর্ত দিয়ে কীভাবে অন্যের কারখানা চালাবে। আবার এত কম সময়ের জন্য এগুলো লিজ দেওয়া হচ্ছে। এত অল্প সময়ের জন্য কেন একজন উদ্যোক্তা এত বড় বিনিয়োগ করবেন।

আ. বারিক আরও বলেন, এখন পাটগুলো টেক্সটাইলে দিয়ে সম্পূর্ণ পাটখাতকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা হচ্ছে। টেক্সটাইলগুলো বিদেশ থেকে তুলা এনে সুতা বানাবে। আর আমার দেশের পাটচাষিরা দাম না পেয়ে পাট উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। এসব মিল পুনরায় চালু করে পাটের যে উন্নয়নের স্বপ্ন ছিল তা একদম শেষ হয়ে যাবে।

এনএইচ/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।