ফরাসউদ্দিনের প্রশ্ন

অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৫ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রতি বছর ৭০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে এমন মন্তব্য করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, মুদ্রাপাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কেন পদক্ষেপ নেয় না? ধরার পরও কেন এগুলোর ব্যাপারে অ্যাকশন নেয় না। আমি বুঝতে পারছি না।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান।

ফরাসউদ্দিন বলেন, সরকার বাহাদুর কেন মুদ্রাপাচারকারীদের বিরুদ্ধে তেমন পদক্ষেপ নেয় না? ৭০০ কোটি ডলার প্রতিবছর পাচার হচ্ছে। আমি বলছি... সবাই বলছে। কেন আমরা ধরার পরও রাখতে পারি না। কেন এগুলোর ব্যাপারে অ্যাকশন নেয় না। আমি বুঝতে পারছি না।

এসময় সরকারের শস্য মজুত আড়াইগুণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের সাপ্লাই বাড়াতে হবে। কীভাবে বাড়াবো? চমৎকার বোরো ফসল হচ্ছে, কোনো সময় আমরা সংগ্রহ করতে পারি না। কেন পারি না? মধ্যস্বত্বভোগী। অসাধু কর্মকর্তা এবং মিলমালিকরা মিলে আমার কিষাণ-কৃষাণিদের কাছে গিয়ে বলে তোমার ধান বিক্রি করো। তারা বিপদে পড়ে।

তিনি বলেন, সরকার বাহাদুরের কাছে নিবেদন এ বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এখন যে মজুত আছে, তার আড়াইগুণ মজুত করে, অন্তত ৩-৪ মাস ধরে খোলা মার্কেটে বিক্রি করতে হবে। খুচরা বিক্রেতাসহ সবার ওপর মনিটরিং করতে হবে।

বাজেটের পরিধি বড় হওয়া দরকার এমন মন্তব্য করে সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাজেটের পরিধি আরও বড় হওয়া দরকার। আইডিয়াল হলো জিডিপির ২০ শতাংশ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আমরা কোনো বছরই শতকরা ১৭ ভাগের বেশি যেতে পারি না।

তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সব প্রশ্নের বড় প্রশ্ন আমরা রাজস্ব আদায় করতে পারি না। আমাদের ৯০ লাখ লোকের অনেক রাজস্ব দেওয়ার কথা, তার মধ্যে মাত্র ৯ লাখ লোকের কাছ থেকে আমরা নিতে পারি। এটা আমি বলবো আমাদের সিস্টেমের ব্যর্থতা। তাদের (যারা রাজস্ব দেয় না) কোনো দোষারোপ করছি না, তাদের কাছে আমাদের যেতে হবে।

সুদের হার ও মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, সুদের হারের কথা বলা হয়। সুদের হার একটা মাত্র ইন্সট্রুমেন্ট। ছয়-নয়’র সময় কি ইনফ্লেশন ছিল? তখন আমরা বলেছিলাম সুদ বাড়ান। বলা হয়েছিলো সুদ বাড়ালে কি ইনফ্লেশন কমানো যায় না কি। এরপর বলা হলো ইনফ্লেশন হলে কি অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যাবে।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, আমরা বৈদেশিক ঋণ নেই। যখন ডেপ্রিসিয়েশন হয়, তার ঋণটা বহুগুণে বেড়ে যায়। কেন আমরা আজকে পর্যন্ত একটা মান করতে পারলাম না বৈদেশিক মুদ্রার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উদ্যোক্তারা।

তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে কোথাও বহুবিধ বিনিময় হার নেই। এখানে বহুবিধ বিনিময় হার রাখা হয়েছে, শুধুমাত্র মধ্যস্বত্বভোগীদের সুবিধার জন্য। একক বিনিময় হার করবেন, বেশি টাকা পাবেন রেমিট্যান্স প্রদানকারী। এই বিনিময় হারটা ৯০ দশকে যেভাবে গণনা করা হতো ওইভাবে করবেন। কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ২-৩ টাকার বেশি ব্যবধান রাখবেন না। তাহলে দেখবেন রেমিট্যান্স হবে।

এ সময় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে দয়া করে ঋণ নেবেন না। তাহলে প্রাইভেট সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়াটা প্রপোজ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ। তারা তাদের স্বার্থে করে। এখন সুদের হারের সঙ্গে কোনো বেশ-কম নেয়। যারা জীবন-যৌবন সবকিছু দিয়ে দেশের সেবা করেছে তারা উপকার পাক। তাদের কাছে থেকে যদি নেন ইনফ্লেশন হবে না, ঘাটতি কমবে।

এমএএস/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।