করোনা : প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সংক্ষিপ্ত হচ্ছে সিলেবাস
করোনাভাইরাসের কারণে অচল হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষাকার্যক্রম। গত একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কবে সচল হবে তাও অনিশ্চিত। এ অবস্থায় চলতি শিক্ষাবছরের অর্ধেক সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে ক্লাস-পরীক্ষা কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব অচল হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বে লক্ষাধিক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আরও প্রায় ১৬ লাখের অধিক মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে জীবন-মরণের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও মহামারি আকার ধারণ করছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত দেশে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৪ জন। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ শনিবার জাগো নিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে টানা একমাস বন্ধ থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এ পরীক্ষা আগামী ১৫ থেকে ২৪ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছি। যারা টেলিভিশনে ক্লাস করতে পারছে না তারা ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে সেসব ক্লাস করতে পারছে। আমাদের কিছু প্রতিকূলতা থাকার পরও কিছু শিক্ষার্থী এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছে। তাদের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় খুললে সেসব ক্লাস সংক্ষিপ্ত আকারে শিক্ষকরা রিভিশন দেবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ২৫ এপ্রিলের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে বন্ধের দিনগুলোতে পরীক্ষা-ক্লাস নিয়ে সমন্বয় করা হবে। আর যদি তা না হয় তবে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করতে হবে। ক্লাস-পরীক্ষা কমিয়ে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ শেষ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
জানা গেছে, গত একমাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের চলতি বছরের সিলেবাস অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা আয়োজন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে তা অনিশ্চিত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সংসদ টেলিভিশনে পাঠদান সম্প্রচার শুরু করা হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে অনেকে সেসব ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার কারিগরি, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এর আওতায় আনা হয়নি। এ কারণে টেলিভিশন পাঠদান নিয়ে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে এমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শিক্ষার্থীরা ছয় মাস পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। এটি পুষিয়ে নিতে সিলেবাসের ক্লাস-পরীক্ষা কমিয়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে একটি নতুন পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুক চৌধুরী শনিবার জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণ ছুটির মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সিলেবাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। তবে এটি আরও দীর্ঘায়িত হলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কিছু ক্লাস-পরীক্ষা কমিয়ে আনা হতে পারে।
চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম শনিবার জাগো নিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিশ্বের কারও নিয়ন্ত্রণে নয়, এটার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। এ কারণে বিশ্ব অচল হয়ে পড়েছে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে টেলিভিশনে ক্লাস কার্যক্রম শুরু করলেও তাতে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সুবিধা পাচ্ছে, আর ৬০ শতাংশ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করা অসম্ভব।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে জুন-জুলাই মাস লেগে যেতে পারে। এর ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের সেশনজটে না ফেলতে নতুন করে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের প্রণোদনা দিয়ে বন্ধের দিনগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে সিলেবাস শেষ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্লাস-পরীক্ষা কমিয়ে আনা যেতে পারে।
১৯৭১ সালে এক বছর দেশের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ ছিল, তা পুষিয়ে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, আগে থেকেই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা না হলে সংকট কাটিয়ে গেলেও শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম আরও বলেন, বন্ধের সময়গুলোতে হাউজ টিউটরদের ওপর নির্ভর না করে অভিভাবকদের তাদের সন্তানকে পড়াতে হবে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলে বাসায় বসে অলস সময় পার করলে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে অভিভাবকদের দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করাতে হবে। আর যাদের পড়ানো সম্ভব হবে না তাদের সন্তানকে নিয়মিত পড়ালেখা করতে চাপ দিতে পরামর্শ দিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ।
এমএইচএম/বিএ/এমকেএইচ