প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিকের ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে

করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন বন্ধের পর স্কুলে ফেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের চেয়ে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। এছাড়া ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রী উপস্থিতি বেড়েছে। আর নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বেশি কমেছে। ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইনের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশে কর্মরত ক্যাম্পেইন পরিচালনাকারী ২১টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এ কার্যক্রমে অংশ নেয়।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার একটি হোটেলে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হবে। সরকারের অনেক গবেষণা ফলাফলের সঙ্গেই এই গবেষণা মিলে গেছে। যারা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে একদম তৃণমূলে গিয়ে কাজ করতে হবে।
দীপু মনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে কাজ করবো বলে ২ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত দুজন কাউন্সিলিংয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন। আর প্রতিটি জেলায় একজন করে পেশাদার কাউন্সিলর থাকবে। সবাই মিলে কাজ করলে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই পূরণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে আমরা মনে করি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমীক্ষা চলাকালীন তিন সপ্তাহে স্কুলগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৬ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। মেয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল ১৪ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ। একই সঙ্গে মাধ্যমিক স্তরে অনুপস্থিত ছিল ৩৪ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী ও ২৮ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার প্রাথমিক কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া, বাল্যবিবাহ, পরিবারের অন্য এলাকায় স্থানান্তর, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অনাগ্রহ ইত্যাদি।
গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্কুলে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ও। সমীক্ষায় দেখা যায়, যে ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে মাস্ক পরে ও সামগ্রিকভাবে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।
সমীক্ষা অনুসারে, শিক্ষার্থীরা লকডাউনের সময় খিটখিটে মেজাজ, একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক চাপ অনুভব করতো। যার কারণ হিসেবে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন- আর্থিক সংকট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, বাল্যবিবাহের ঝুঁকি, শিক্ষা বন্ধের সুযোগ, পরিবারে সমস্যা বৃদ্ধি, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত না হতে পারা ও পাঠ বোঝার অসুবিধার কথা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার পরে যদিও এই সমস্যাগুলো হ্রাস পেয়েছে। তবে দেখা দিয়েছে কিছু নতুন সমস্যা। যেমন- শেখায় অনাগ্রহ, পাঠ বুঝতে অসুবিধা ও অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারার চ্যালেঞ্জ।
দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ ও মানসিক সুস্থতা পর্যবেক্ষণ করতে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
ক্যাম্পেইনটি পরিচালনাকারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো হলো– ব্র্যাক, ব্রিটিশ কাউন্সিল, গণসাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, এডুকো বাংলাদেশ, এফআইভিডিবি, ফ্রেন্ডশিপ, হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশ, হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল- হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন, জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন, লিওনার্ড চ্যাশায়ার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, রুম টু রিড বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, সাইটসেভারস, সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ, স্ট্রমী ফাউন্ডেশন, টিচ ফর বাংলাদেশ, ভিএসও, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং ইপসা। সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে নিবিড়ভাবে সরকারের সঙ্গে কাজ করাই এই ক্যাম্পেইনের মূল লক্ষ্য।
এমএইচএম/আরএডি