আমি হয়তো মানুষ নই: শ্বাসরুদ্ধকর করুণ কাহিনি

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৪

সাবাবা মোর্শেদা টুই

সত্যিই গা শিহরিত করা উত্তেজনাপূর্ণ টানটান রহস্যঘন কাহিনি লেখক প্রিন্স আশরাফের ‘আমি হয়তো মানুষ নই’। শিহরণ না বলে শিউরানো বলাই বোধহয় বেশি যথাযথ হয়। কারণ আক্ষরিক অর্থেই গল্পটা গা শিউরে দেওয়ার মতোই ছিল। আমি পড়তে পড়তে কতবার যে বইটা পাশে রেখে থ মেরে গেছি, তার হিসেব নেই। এত অনবদ্য আর শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা যে কাউকেই এমন করতে বাধ্য করবে।

দুই মেডিকেলপড়ুয়ার অসুস্থ ও বীভৎস একটি এক্সপেরিমেন্ট চিরতরে জ্বলজ্যান্ত একজন মানুষকে মনুষ্যজগত থেকে বহিষ্করণ করে। কীভাবে? বলবো? জ্যান্ত চামড়া তুলে নেওয়ার কথাটা রাগের মাথায় বলে থাকা সমাজে প্রচলিত অতি পরিচিত একটি কথা। অহরহ আমরা অতি রাগের বশে তার গায়ের চামড়া তুলে নেবো কথাটা বলে থাকি। আপ্তবাক্যটিকে লেখক সুচারুভাবে লেখনীর মাধ্যমে বাস্তবে তুলে এনেছেন।

হতভাগ্য এক্সপেরিমেন্টের শিকার মানুষটির গাত্রচর্ম খোয়ানোর এক করুণ কাহিনি এটি। মানুষটি নির্দোষ হয়েও কতটা নিপীড়িত হয়। মানুষের তাড়া খেয়ে বনের গভীরে গিয়ে বেচারিকে আশ্রয় নিতে হয়। অনাহারে দিন কাটে হতভাগ্য চর্মবিহীন মানুষটার। সেইসাথে প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত যুঝতে হয়। থাকতে হয় সদা ত্রস্ত। করুণ পরিণতির শিকার হয়েও তাকে কি না পালিয়ে বেড়াতে হয়। লোকালয়ের সাধারণ মানুষের চোখে ‘শিকারী পশু’ হিসেবে। অবশেষে অজস্র সংগ্রামের পর উষ্ণ অভ্যর্থনা মেলে এক সহৃদয় পশুচিকিৎসক প্লাস বৈজ্ঞানিক প্রফেসরের শরণে।

বৃদ্ধ প্রফেসর বনের নিবিড়ে নিজ চিড়িয়াখানা বা অভয়ারণ্য দুইয়ের সন্নিবেশ তৈরি করে পোষা একজোড়া মানুষ তুল্য বানরকে সহযোগী হিসেবে সেখানে ল্যাবরেটরি আর বসত গেড়ে বাস করছেন। গবেষণা করছেন, নেকড়েকে কুকুর বানানোর প্রয়াস করছেন। এমতাবস্থায় সেই হতভাগ্য চামড়া ছিলা মানুষটিকে আবিষ্কার করে পরে নিজেই তার শরীরে প্রাণীর চামড়া প্রতিস্থাপন করে তাকে প্রাণে বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হন। কিম্ভুতকিমাকার জন্তুরূপী মানুষে রূপান্তরিত হয় হতভাগ্য লোকটা। তার মধ্যে পাশবিক কিছু শক্তি ও ক্ষমতার দেখা পাওয়া যায় পরবর্তীতে।

আরও পড়ুন

এরপরে ঘটনা বিভিন্ন দিকে মোড় নেয়। একজন ব্যবসায়ীর অপহৃত ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে পশুরূপী মানুষটিকে করুণ দুর্ভাগ্যদায়ক নিয়তির সম্মুখীন হতে দেখা যায়। ভালোবাসার মেয়েটির জন্য হতভাগ্যকে বরণ করতে হয় করুণ পরিণতি। বুক কষ্টে মোঁচড় দিয়ে ওঠে কাহিনির এই অংশটি পড়ার সময়ে। মানুষরূপী পশু বনাম পশুরূপী হতভাগ্য মানুষের সংঘাত এবং তাদের স্বরূপ স্পষ্ট দেখা যায়। অনুভবও করা যায় দীর্ঘশ্বাসের সাথে। বিষাদ জেগে ওঠে মনের গহিনে। চিন্তা জাগে মনে, এমনও কি হয়? হলে, তা কেন হয়? কেন মানুষ মনুষ্যত্ব বিস্মৃত হয়? কেনইবা পাশবিকতা দেখা দেয় তার আচরণে? মানবিকতা আর পাশবিকতার সমান্তরাল অবস্থান সত্যিই মনে দাগ কাটে।

এতই ভালো লেগেছে বইটি যে, থ্রিলার জনরার হলেও বইটি আসলে সমসাময়িকতাকেই বেশি নির্দেশ করে। সবদিক থেকেই।প্রিন্স আশরাফের লেখার আমি বরাবরই ভক্ত। আমার মতে, এ উপন্যাস ছিল তার লেখা সবচেয়ে বেস্ট উপন্যাস। মাস্ট রিড বই। সবার উচিত বইটি একবার অন্তত পড়া। শিক্ষণীয় অনেক কিছু আছে এতে।

বানানের আর সম্পাদনায় টুকটাক কয়েকটি ভুল ধরা পড়েছে। এ ছাড়া প্রায় দুইশ পৃষ্ঠার বইটি পড়তে ক্লান্তি লাগে না। বরং এক বসায় শেষ করে ফেলতে মন চায়। লেখনশৈলী বেশ। তবে সবচেয়ে ভালো ছিল কাহিনি বিন্যাস। চরিত্রদের প্রতি আরেকটু যত্নবান হওয়া যেত। তাহলে কাহিনি আরও জমাট হতো। শেষদিকে সামান্য টেনে লম্বা করা হয়েছে। যদিও তা অগ্রাহ্য করা যেতেই পারে।

বইয়ের নাম: আমি হয়তো মানুষ নই
লেখক: প্রিন্স আশরাফ
প্রচ্ছদ: রিয়াজুল ইসলাম জুলিয়ান
প্রকাশনী: প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা
মূল্য: ৫০০ টাকা।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।