ভুল মানুষকে দেওয়া চুমুই হয়ে যায় বিখ্যাত

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিশ্বের বিখ্যাত চুমুর দৃশ্যটি ফ্রেমবন্দি করেছিলেন আলোকচিত্রী আলফ্রেড আইজেন্টেড। সময়টা ছিল ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট। যুদ্ধ শেষে ফিরছেন সৈন্যরা। বন্দরে ক্যামেরা হাতে ঘুরছেন আলফ্রেড। ছবি তুলছেন সৈন্যদের ফিরে আসার মুহূর্ত। প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তগুলো।

ঠিক সে সময় জাহাজ থেকে নেমে এলেন যুদ্ধ ফেরত এক নাবিক। সামনে তখন দাঁড়িয়ে এক সেবিকা। নাবিক দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করলেন সেই সেবিকাকে। সবার মতো আলোকচিত্রী আলফ্রেডও ভেবেছিলেন, যুদ্ধ শেষে বহুদিন পর প্রেমিক ফিরে এসে আদরে ভাসাচ্ছেন প্রেমিকাকে, ভালোবাসছেন। একটুও সময় নষ্ট করেননি ফ্রেমবন্দি করে ফেলেন সেই দৃশ্য। বিশ্বখ্যাত ‘লাইফ ম্যাগাজিন’-এ সর্বপ্রথম এই ছবিটি প্রকাশিত হয়।

jagonews24

আরও পড়ুন: প্রিয় পুরুষের প্রশংসা করার দিন

কিন্তু বহুদিন পর জানা যায়, এই ছবির মূল দুই চরিত্ররা আসলে প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন না। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়? আরও অবাক করা তথ্য হচ্ছে তারা একে অপরকে চিনতেনও না। তাহলে তারা চুমু খেয়েছিলেন কেন একে অপরকে? এমন প্রশ্ন আপনার মনেও ঘুরছে নিশ্চয়ই?

দীর্ঘদিন পর জানা যায়, তারা ছিলেন জর্জ মেন্ডনসা ও গ্রিটা ফ্রিডম্যান। সেই বিখ্যাত চুমু খাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত জর্জ ও গ্রিটা কেউই কাউকে চিনত না। ১৯৬০ সালে গ্রেটা জিমার ফ্রিডম্যান প্রথম ছবিটি দেখেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই চিনতে পেরেছিলেন যে তিনিই সাদা পোশাকে চুম্বন করা নারীটি তিনি নিজেই।

jagonews24

এরপরি তিনি লাইফ ম্যাগাজিনে নিজের পরিচয় জানিয়ে চিঠি পাঠান। লাইফ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে ১৯৮০ সালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি ছবিটি ম্যাগাজিনে নিয়ে আসেন এবং আলোকচিত্রী আলফ্রেড আইজেন্টেড তাতে স্বাক্ষর করেন এবং ক্ষমা চান ভুলের জন্য।

আলোকচিত্রী আইজেন্টেড পরে জানান, তিনি যখন ওই ছবিটি তোলেন তখন নাকি হাজার-হাজার নারী-পুরুষ সেখানে একে অপরকে চুমু খাচ্ছিলেন। তবে তারা যে কেউ কাউকে চিনতেন না তা আসলে তিনি বুঝতে পারেননি।

সেসময় গ্রিটা ফ্রিডম্যান ছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সী একজন তরুণী। একজন ডেন্টাল অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে টাইমস স্কোয়ারের একটি অফিসে কর্মরত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে এই খবর শুনেই তিনি টাইম স্কোয়ারের দিকে ছুটে যান। সেখানে তখন জনস্রোত। একজন আরেকজনকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করে। তেমনই জর্জ মেন্ডনসা তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিলেন।

তবে ছবিটি নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল বিস্তর। অনেকেই বলেছিলেন ছবিটি যৌন নিপীড়নের প্রতীক। যদিও ছবিটির অন্যতম চরিত্র গ্রিটা ফ্রিডম্যান অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এর মধ্যে অনৈতিক বা নিপীড়নের কিছুই ছিল না।

jagonews24

ফ্রিডম্যান এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, সেই সব চুমু কিন্তু কোনো যৌনতার কারণে নয়, বরং স্বস্তি আর মুক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

যদিও জর্জ আসলে দূর থেকে ফ্রিডম্যানকে তার বান্ধবী ভেবেছিলেন। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার আনন্দে তিনি খুবই উত্তেজিত ছিলেন। তাই ভালোভাবে লক্ষ করেননি ফ্রিডম্যানকে। পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি তার বান্ধবী নন। তাদের পেছনেই ছিলেন তার বান্ধবী। টাইমস স্কোয়ারে এই বিখ্যাত চুমুর একটি প্রতিকৃতিও তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ সালে গ্রিটা ফ্রিডম্যান মারা যায়। জর্জ মেন্ডনসা বেঁচে ছিলেন ২০১৯ সাল পর্যন্ত।

সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন/স্টান্ডার্ড ইউকে

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।