‘মে ডে’ ছিল বসন্ত উৎসবের দিন

কানিছ সুলতানা কেয়া
কানিছ সুলতানা কেয়া কানিছ সুলতানা কেয়া , সহ সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৫:২৫ পিএম, ০১ মে ২০২৪

আজ পহেলা মে, বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’, যা ‘মে দিবস’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই ‘মে ডে’ পরিচিত প্রাচীন এক বসন্তের উৎসব হিসেবে।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। মে ডে অর্থাৎ পহেলা মে বিশ্বের অনেক দেশে বসন্ত উৎসব হিসেবে পালিত হতো। শীতের শেষ এবং গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এই সময়টাতে ঘরে নতুন ফসল তোলার পর কৃষকরা অবসর কাটাত। আর এই অবসর সময়টাকেই উদযাপন করতে নানান আনন্দ ও উৎসবের আয়োজন করা হতো।

ফসলের ক্ষেতগুলোতে তখন মাত্র নতুন বীজের অঙ্কুর দেখা দিয়েছে। গবাদি পশুদের চারণভূমিতে রেখে আসা হতো। বলা যায় বসন্তে তেমন কাজ থাকত না কৃষকদের। ঘরবাড়ি এবং গবাদি পশুর ঘরের দরজাগুলোতে হলুদ মে ফুল দিয়ে সাজানো হতো। মধ্যযুগে গেলিক লোকেরা বেলটেনে আগুন জ্বালিয়ে উৎসব করতো, যার নাম ছিল ‘আগুনের দিন’। লোকেরা বড় বড় বনফায়ার তৈরি করেছিল এবং উদযাপন করতে রাতে নাচ করেছিল। প্রাকৃতিক ও অতিপ্রাকৃত উভয় প্রকার ক্ষতির হাত থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য সেই সময়ে আচার-অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতো

ইংল্যান্ডে মে দিবসের একটি দীর্ঘ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে। যার কিছু আমেরিকায় পৌঁছেছিল। শিশুরা রঙিন ফিতা ধরে ম্যাপল গাছের চারপাশে নাচবে। লোকেরা বনফুল এবং সবুজ ডালপালা জড়ো করে, ফুলের হুপ এবংমালা বুনে মে রাজা ও রানিকে মুকুট পরিয়ে দিত পহেলা মে।

‘মে ডে’ ছিল বসন্ত উৎসবের দিন

আমেরিকা-ইউরোপজুড়ে পহেলা মে একসময় ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন’ বলেই পরিচিত ছিল। উত্তর গোলার্ধের মানুষেরা মে দিবসের প্রথম দিনটিতে বসন্তবরণ উৎসবে মেতে উঠত। রিক্ত–শূন্য শীতের অবসান ঘুচিয়ে তা ছিল উষ্ণতার উৎসব। বিশেষত শ্রমজীবী মানুষদের কাছে বসন্তের আগমন ছিল বিশেষ কিছু।

জঙ্গল থেকে ম্যাপল গাছ উঠিয়ে নিয়ে আসতেন তারা। এরপর বয়স্করা এবং যারা পুরোহিত ছিলেন তারা গাছের চারপাশে নাচতেন, তাদের ফসল এবং সব জীবন্ত জিনিসের উর্বরতার জন্য প্রার্থনা করতেন! অল্পবয়সী যারা বিবাহযোগ্য ছিল তাদের বিয়ে হওয়ার জন্য প্রার্থনা করতেন।

এই সময় আরও একটি মজার ঘটনা ঘটত তা হচ্ছে, যদি একজন মেয়ে এবং ছেলে সূর্যাস্তের সময়ের মধ্যে একে অপরকে পছন্দ করতে পারে এবং তাদের প্রেমের সম্পর্ক যদি অব্যাহত থাকে। তাহলে পরবর্তী ৬ সপ্তাহ পঅর তাদের ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হতো। একে আবার বলা হতো ‘জুন বিবাহ’। এটি একটি ঐতিহ্য হয়ে উঠেছিল।

মধ্যযুগে প্রায় সব গ্রামেই ম্যাপল গাছ ছিল। কার সবচেয়ে লম্বা বা সেরা ম্যাপল গাছ আছে তা দেখার জন্য শহরগুলোতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাচীন উৎসবে নৃত্য পরিবেশনা, নাটক এবং সাহিত্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই উৎসবে একটি মেয়ে মে কুইন সাজতো। তাকে সাধারণত ফুলের মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয় এবং নাচ শুরু হওয়ার আগে মে কুইন সবার উদ্দেশে বক্তৃতা দিত।

‘মে ডে’ ছিল বসন্ত উৎসবের দিন

মজার বিষয় হল, ১৯ শতকের দিকে, ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত, কিছু মার্কিন কলেজে ম্যাপল নাচ এবং বসন্ত উৎসবের আয়জন করা হতো। যা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল আমেরিকাজুড়ে। যে আয়োজনে থাকত নাটক, স্কটিশ নাচ, মরিস নাচ, একটি ক্যাপেলা কনসার্ট এবং সাংস্কৃতিক নৃত্য এবং সংগীত প্রদর্শন সহ আরও অনেক কিছু।

১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে এই উৎসবের আয়োজন কমতে থাকে। তবে মে কুইন বা ম্যাপল গাছের প্রতিযোগিতা একটি জনপ্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। এখনো ইউরোপ আমেরিকায় ম্যাপল নৃত্য করা হয়। বিশেষ করে স্কুল, কলেজগুলোতে এই দিনটিতে বসন্ত উৎসব, ম্যাপল নাচ পরিবেশন করা হয়।

সূত্র: অ্যালম্যানাক, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, হিস্টোরিক ইউকে

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।