আর্থিক প্রণোদনা পাননি চিকিৎসকরা, করোনা চিকিৎসায় অনীহা
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল। এখন এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালটির চিকিৎসক এবং নার্সরা এই চিকিৎসাসেবা দিতে তেমন আগ্রহী নন।
চিকিৎসক এবং নার্সরা জানিয়েছেন, গত বছর এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক প্রণোদনা, দৈনিক ভাতা, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার খরচ দেয়নি সরকার। এসব খাতে সরকারের কাছে বকেয়া পাওনা প্রায় ৭০ লাখ টাকা। ওই টাকা না দেওয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে আগ্রহ হারিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই নতুন করে চিকিৎসাসেবা শুরুর আগে বকেয়া টাকা পেলে চিকিৎসক-নার্সদের মধ্যে সেবা খাতে আগ্রহ বাড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে গেলে ঢাকার পাঁচটি হাসপাতলে করোনার চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই পাঁচটি হাসপাতালের একটি ছিল ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল। তখন এই হাসপাতালের সব বিভাগের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ করে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা। কিন্তু করোনা চিকিৎসা নিয়ে দেশের চিকিৎসক এবং নার্সদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। সে আতঙ্ক দূর করতে প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেক হাসপাতাল সেসব সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে বকেয়া বিল এখনো আটকে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তারা অনুমোদন দিলে ওই টাকাটা পাবেন চিকিৎসক এবং নার্সরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন ডিএসসিসি পরিচালিত এই হাসপাতালটির অবস্থান পুরান ঢাকার নয়াবাজারে। ১৫০ শয্যার এই হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসক রয়েছেন ১৫ জন। তবে গত বছর এই ১৫ জনের সঙ্গে আরও ১৯ জন চিকিৎসক ও ৩৩ জন নার্স প্রেষণে নিয়োগ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। তখনই হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন পাঁচ হাজার করোনা রোগী। ভর্তি হয়েছিলেন ৪৯৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন।
ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, এবার করোনা রোগের চিকিৎসার জন্য ১০৫টি শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরমধ্যে আইসিইউ থাকবে পাঁচটি। রোগীদের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এবার ৫৬ জন চিকিৎসক ও ৬০ জন নার্স চেয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর মাত্র ১৬ জন চিকিৎসক ও ২৭ জন নার্স প্রেষণে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু গতবছরের প্রণোদনাদসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ না পাওয়ায় কাজে গতি আসছে না।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১১টা। সরেজমিনে দেখা যায়, নয়াবাজার থেকে বাবুবাজার সেতুতে উঠতে হাতের ডান পাশে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালের নিচ তলায় বহির্বিভাগে চিকিৎসা এবং করোনা টিকা নিচ্ছেন লোকজন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলায় পৃথক কয়েকটি কক্ষের দরজায় লেখা করোনা ইউনিট। তবে ভেতরে কাউকে দেখা যায়নি। বেডগুলোও এলোমেলো হয়ে রয়েছে। এর ওপর কয়েক স্তর ধুলাবালির আবরণ পড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় হাসপাতালের পূর্ব পাশে অক্সিজেনের প্লান্ট স্থাপন করছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এই কাজ শেষ হতে আরও দুই-তিন দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, গতবছর করোনার চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসক এবং নারীদের মধ্যে সংক্রমণের ব্যাপক আতঙ্ক ছিল। তখনই এই হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স এবং অন্যান্য স্টাফ মিলে ১৯০ জনকে প্রণোদনা, দৈনিক ভাতা, হোম কোয়ারেন্টাইনের খরচ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমিতে থাকার খরচ) বহন করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু অন্যান্য হাসপাতাল সেসব সুযোগ-সুবিধা পেল মহানগর জেনারেল হাসপাতালের তা পায়নি। আদৌ পাবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। এমন অনিশ্চিয়তায় ফের করোনার চিকিৎসা নিয়ে সবার মধ্যে আগ্রহ কম।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক প্রকাশ চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, এবারও ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশাকরি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই করোনা রোগী ভর্তি করা যাবে।
চিকিৎসক এবং নার্সদের গত বছরের বকেয়ার বিষয়ে প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেন, গত বছরের হিসেব প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। তারা সেই ফাইল যাচাই-বাছাই করে অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখনো ফাইল ছাড়েনি। এমন অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এমএমএ/এসএইচএস/জেআইএম