বিদ্যুৎবিহীন ভেন্টিলেটর ‘অক্সিজেট’র তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু

করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে এবং উচ্চগতির ভেনটিলেশনের জন্য অক্সিজেট নামক স্বল্প মূল্যের সিপ্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইস তৈরি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এই যন্ত্র কোনো ধরনের বিদ্যুৎশক্তি ছাড়াই শুধু অক্সিজেন সিলিন্ডার বা মেডিকেল অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে। ইতোমধ্যে এটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার (১১ মে) বুয়েট থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমে স্বল্প মাত্রায় অক্সিজেন প্রদান করা হয়। কিন্তু এই স্বল্প মাত্রায় রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে উচ্চগতির অক্সিজেন প্রবাহ প্রয়োজন পড়ে, যা রোগীর অবস্থার অবনতি রোধ করতে পারে। করোনার প্রকোপ শীর্ষে থাকা অবস্থায় দেশের হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে হাই-ফ্লো নেজাল কেনোলা যন্ত্র পাওয়া যায় না। এ ছাড়াও এ যন্ত্রগুলো ব্যয়বহুল ও ব্যবহার কৌশল জটিল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়। সহজে ব্যবহারযোগ্য অক্সিজেট সিপ্যাপ এ ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে।
এতে বলা হয়েছে, অক্সিজেট সিপ্যাপ ভেন্টিলেটর স্বল্প মূল্যে সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে পারে এবং এতে রোগীদের আইসিইউতে ভর্তি কমাতে সাহায্য করবে। অক্সিজেট একটি সুক্ষ্ম ভেঞ্চুরি ভালভের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেন এর সংমিশ্রণ তৈরি করে অন্তত ৬০ লিটার গতিতে সরবরাহ করে। মেডিকেল অক্সিজেন সাপ্লাই ও দ্বৈত ফ্লো-মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০% পর্যন্ত অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন দিতে পারে। এই ডিভাইসটি যুক্তরাজ্যের সিপ্যাপ যন্ত্র পরীক্ষণের নির্দেশনা অনুযায়ী বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পরীক্ষা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) এর অনুমোদনক্রমে এটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফল ভাবে অতিক্রেম করে তৃতীয় ধাপের অনুমতি লাভ করেছে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় দেখা যায়, চিকিৎসা দেওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেট সিপ্যাপ রোগীদের রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা (অক্সিজেন স্যাচুরেশন) গড়ে ১১.২% বৃদ্ধি করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে অক্সিজেট সিপ্যাপের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৪০ জন রোগীর অর্ধেক অংশকে অক্সিজেট সিপ্যাপ এবং বাকি অর্ধেক অংশকে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এর মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তৃতীয় ধাপে সাফল্য লাভ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই যন্ত্রটি হাই-ফ্লো নাজাল ক্যানুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অক্সিজেট সিপ্যাপ প্রকল্পটির আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) শীর্ষক প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছেন বুয়েট বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, সাঈদুর রহমান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন ড. তওফিক হাসান, সহকারী অধ্যাপক, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট।
এমএইচএম/ইএ/এমএস