করোনার টিকা নেয়ার সিরিয়ালেও ‘নয়-ছয়’র অভিযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২১

অডিও শুনুন

আনোয়ার হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ৭২ বছর বয়সী আনোয়ার করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধী টিকা নেয়ার জন্য গত ১২ জুলাই অনলাইনে নিবন্ধন করেন। পছন্দের কেন্দ্র হিসেবে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নির্বাচন করেন তিনি। নিবন্ধন শেষে টিকার কার্ড সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে ক্ষুদেবার্তা পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু গত ছয় দিনেও তার কাছে এমন কোনো বার্তা আসেনি।

অথচ তার পরিচিত একজন চলিশোর্ধ্ব প্রতিবেশী তিন দিন পর গত ১৫ জুলাই একই কেন্দ্রে নিবন্ধন করেন এবং দুই ঘণ্টা পরই ক্ষুদেবার্তা পেয়ে পান। দুদিন পরে গিয়ে টিকাও দিয়ে আসেন। সেই প্রতিবেশী আনোয়ারকে জানান, তিনি তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নেয়ার ক্ষুদেবার্তা পেয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাগো নিউজের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান আনোয়ার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এমন এক দেশে আছি, যেখানে সব কিছুতেই নয়-ছয় যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

অভিযোগ উঠেছে, শুধু এই বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের টিকাদান কেন্দ্রেই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের কেন্দ্রেও টিকার সিরিয়াল নিয়ে ‘নয়-ছয়’ হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্ধারিত বিভিন্ন হাসপাতালের টিকাদানকে ঘিরে এক শ্রেণীর দালালচক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রের লোকজন বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্র থেকে নিবন্ধনকারীদের কাছে ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর দায়িত্বে নিয়োজিতদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, যার ধারাবাহিকতায় টাকার বিনিময়ে ক্ষুদেবার্তা সিরিয়াল অনুযায়ী না পাঠিয়ে আগে-পরে পাঠানো হচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীরা টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল আগে ও পরে ব্যবস্থা করার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে তাৎক্ষণিকভাবে টিকার ক্ষুদেবার্তা পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রবাসীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে অধিক বয়স্কদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বয়স ও নিবন্ধনের দিনক্ষণ দেখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।’

তিনি দাবি করেন, সিরিয়াল ভঙ্গ করে টিকা প্রদানের ব্যাপারে তারা কোনো অভিযোগ পাননি। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা সংশ্লিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে কারণ জানতে চাইবেন।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে রাজধানীসহ সারাদেশে টিকা গ্রহণেচ্ছু নাগরিকের সংখ্যা বাড়ছে। ১৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে এক কোটি ছয় লাখ এক হাজার ৩৩৪ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন।

১৬ জুলাই পর্যন্ত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৩৩ জন। এ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৮ জন। এছাড়া ফাইজারের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৪৯ হাজার ৩১২ জন। সিনোফার্মের প্রথম ডোজের টিকা সাত লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজের টিকা দুই হাজার ২৯৭ জন, মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৫৯ জন নিয়েছেন।

এমইউ/এইচএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।