বুস্টার ডোজ গ্রহণকারী শতভাগের দেহে অ্যান্টিবডি
করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ অর্থাৎ বুস্টার ডোজ গ্রহণকারী শতভাগের দেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। দুই ডোজ গ্রহণকারীদের দেহে ৬ মাস পর অ্যান্টিবডির মাত্রা ৭৩ শতাংশ কমেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য ও গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এ গবেষণা থেকে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বুস্টার ডোজ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের জন্য সমসাময়িক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, গবেষণায় দুই ডোজ টিকা নেওয়াদের এক ও ছয় মাস পর এবং বুস্টার ডোজ নেওয়াদের এক ও ছয় মাস পর শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ২২৩ জন ব্যক্তি অংশ নেন। দুই ডোজ টিকা নেওয়াদের এক মাস পর ও এর মধ্যে ৩০ জনের দুই ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর এবং বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর অ্যান্টিবডি পরিমাপ করা হয়।
তিনি বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়াদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ব্যক্তি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। তবে এসব রোগের কারণে অ্যান্টিবডি তৈরিতে কোনো পার্থক্য হয়নি। টিকা নেওয়ার পর প্রথম ধাপে ২২৩ জনের মধ্যে ৯৮ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া যায়। যারা আগেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
টিকা নেওয়ার ছয় মাস পর অধিকাংশের অ্যান্টিবডির পরিমাণ কমেছে। তাদের মধ্যে ৩০ জনের ৭৩ শতাংশ অ্যান্টিবডির মাত্রা কমেছে। গড় অ্যান্টিবডি মাত্রা ৬৭৯২ এইউ/এমএল থেকে ৩৯৬৩ এইউ/এমএল নেমে এসেছে। এসময়ে দুইজনের দেহে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর শতভাগ অংশ নেওয়া সবার শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এছাড়া অ্যান্টিবডির মাত্রা পুনরায় বেড়ে ২০৮৭৮ এইউ/এমএল এসে দাঁড়ায়। এছাড়া রক্তের প্যারামিটার গুলোতে (হিমোগ্লোবিন, প্লাটিলেটসহ অন্যান্য) উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে যোগ করেন তিনি।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকাদানের উদ্দেশ্য হলো মানবদেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা, যা ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ও আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতার আশঙ্কা কমায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে। পাশাপাশি গবেষণা দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যায়, আবার বুস্টার ডোজের মাধ্যমে পুনরায় কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
এ গবেষণায় সহ-গবেষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান প্রমুখ।
এমইউ/আরএডি/ইএ/জিকেএস