হৃদরোগ চিকিৎসায় অর্ধেক খরচ দেবে ‘শিওরকেয়ার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০২ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২

স্বাস্থ্যসেবার খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় অধিকাংশ মানুষকে। এসব রোগীর বড় অংশই হৃদরোগের। যাদের খরচের অধিকাংশ চলে যায় হাসপাতালে ভর্তি, ওষুধ কিনতে এবং রোগ নির্ণয়ে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কম সময়ে চিকিৎসা দিতে দেশি, বিদেশি ও প্রবাসী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে চালু হয়েছে ‘শিওরকেয়ার’ নামের অ্যাপ। এই অ্যাপ ব্যবহার করে হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যয় অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাতে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক কনফারেন্সে একথা জানানো হয়। ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সিটি হেলথ এবং শিওরকেয়ার এই কনফারেন্সের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্ল্যাটফর্মটির তৈরি শিওরকেয়ার অ্যাপে নিবন্ধনের মাধ্যমে সদস্য হয়ে এই সেবা নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে সদস্য পদের মেয়াদ কমপক্ষে ৯০ দিন হতে হবে।

এর আগে মহামারি করোনায়ও সংস্থাটি ডিজিটাল চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। যেখানে সহযোগী হিসেবে আছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। ‘স্বাস্থ্যসেবায় সারথি’ স্লোগানে সেবা দেবে প্রতিষ্ঠানটি।

শিওরকেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. চৌধুরী হাফিজুল আহসান বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশি চিকিৎসক পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছি, অনেক দিন ধরেই তাদের ইচ্ছা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার। আবার আমাদের সমসাময়িক যারা দেশে বহুদিন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর অবসরে গেছেন বা যাচ্ছেন, তাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা দেশের জন্য ভালো কোনো সমন্বিত চিকিৎসা কার্যক্রমে যুক্ত থাকা। যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মনে করে যে, একটা অর্থবহ প্রচেষ্টা আমাদের ছিল। অন্য আরও অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উত্তরণের দিকে নিয়ে যেতে আমাদের চিকিৎসকদেরও একটা ভাবনা এবং দিক-নির্দেশনা আছে, যা আমাদের জনগণের জন্য আস্থাশীল, দায়িত্বশীল, অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবার প্রতিশ্রুতি দেবে। সেই লক্ষ্যে আমরা শিওরকেয়ার নামে এমন একটি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। যাতে বাংলাদেশের মানুষকে দায়িত্বশীল স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশি, প্রবাসী ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অ্যাপ ডাউনলোড করে (শিওরকেয়ার ফিজিশিয়ান পোর্টাল) শিওরকেয়ার কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন। এখানে তাদের পরিচিতি, কাজের বর্ণনা এবং মেডিকেলের কোন ক্ষেত্রে কাজ করেন এসব তথ্যাদি সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।

সাধারণ মানুষ শিওরকেয়ার অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের মেডিকেল রেকর্ড, ইসিজি, এক্স-রে, ল্যাব রিপোর্ট নিজেরাই সংরক্ষণ করতে পারবেন। হাসপাতালে ভর্তি, ওষুধ কেনা কিংবা রোগ নির্ণয়ে খরচ হয় সবচেয়ে বেশি। ওই সময়ে চিকিৎসা কেমন হবে, রোগের ধরন এবং তার নিরাময় কী– এসব নিয়ে কোনো ধারণা না থাকায় রোগীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। শিওরকেয়ার আগে থেকেই সদস্যদের এসব রোগ সম্বন্ধে ধারণা দেবে, প্রতিরোধ করার বিষয়ে সতর্ক করবে এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়াবে। মাঠকর্মী জুনিয়র চিকিৎসকরা পরিবারের সদস্যদের মতো রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলবেন। অ্যাপের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বরেণ্য বিশেষজ্ঞদের টিম ওই রিপোর্ট এবং পুরো বর্ণনা দেখবে। এরপর তাদের মতামত এবং চিকিৎসা নির্দেশনা দেবেন। প্রয়োজনে স্থানীয় চিকিৎসকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রোগী এবং তার নিকটাত্মীয়কে আশ্বস্ত করবেন। প্রাথমিকভাবে শুধু হার্টের চিকিৎসার ক্ষেত্রে শিওরকেয়ার সদস্যদের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে খরচের ৫০ শতাংশ শিওরকেয়ার তার সদস্যদের জন্য বহন করবে।

এর পাশাপাশি অন্য অসুখে হাসপাতালের খরচ এককালীন বহন করা কষ্টকর। এই কথা স্মরণ রেখে, সুস্থ থাকা অবস্থায় ব্যাংকের মাধ্যমে সদস্যদের হেলথ ইক্যুইটি লাইন অব ক্রেডিট নিতে উৎসাহিত করবে শিওরকেয়ার। এর সুবিধা হলো, এই টাকা থাকছে ‘যদি লাগে’ এই ভিত্তিতে। ফলে আগে থেকে ব্যাংক অনুমোদিত লোন এককালীন ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা যখন-তখন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয়ভারের জন্য পাওয়া যাবে, যা পরে ৩০-৩৬ মাসে পরিশোধ করতে হবে। ফলে রোগী এবং পরিবারের ওপর এককালীন টাকা জোগাড়ের চাপ কমবে। এ ছাড়া অচিরেই ল্যাব টেস্ট এবং হাসপাতালের খরচের ক্ষেত্রে সদস্যদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও করবে শিওরকেয়ার।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে বোঝানো, সদস্য তালিকাভুক্ত, সদস্যদের সেবা, হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে কাজ করাসহ স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের এখনও যেতে হবে অনেক দূর। আমরা স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে পারলে যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেখিয়েছেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, সেখানে পৌঁছানো অনেক সহজ হবে।

এই অ্যাপের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, রোগ নির্ণয়ে সাহায্য ও পরামর্শ, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ডিজিটাল মেডিকেল রিপোর্ট সংরক্ষণ এবং রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ বা পরামর্শ অথবা মেডিকেল বোর্ড গঠনে সহায়তা করা।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, এক সময়ে উপজেলা হাসপাতালে কম্পিউটার দেওয়া হলে সেগুলো বাসায় নিয়ে বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেই জায়গা থেকে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক শিক্ষার ফলে স্বাস্থ্যেও এসেছে পরিবর্তন। বিবর্তনের ধারায় এখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ডিজিটাল। ডায়াবেটিক সমিতিও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। জরুরি চিকিৎসা না হলেও অন্যান্য চিকিৎসাগুলো যাতে দিতে পারি। যুগোপযোগী ব্যবস্থায় আমাদের যেতেই হবে। আগামীর বাংলাদেশ ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চলবে। কাজেই এই ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক জগদ নূরুললা।

এএএম/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।