‘জরুরি বিভাগে আধুনিক চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু কমানো সম্ভব’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩০ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যদি সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে দেশে অনেক রোগীর মৃত্যু কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ওয়ান স্টোপ ইমার্জন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ইমার্জেন্সি সার্ভিসের কারণে স্ট্রোক, সড়ক দুর্ঘটনা, হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিল অনেক রোগী বেঁচে যায়। পাঁচ মিনিট আগেও যদি উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে আমাদের দেশে অনেক মৃত্যু কমানো সম্ভব। সারাদেশের হাসপাতালে ওয়ান স্টোপ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালিটি সার্ভিস (ওসেক) চালু করা সম্ভব হলে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে। স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে। মৃত্যুহারও কমে যাবে। এজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এ সেবা পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করবো।

টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, টিকাদানে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। এত অল্প সময়ে এত বিশাল সংখ্যক মানুষকে আমরাই প্রথম টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। এ কথা এখন ডাব্লিউএইচও বলে। কোভিডকালে আমরা নতুন নতুন হাসপাতাল তৈরি করেছি। পুরোনো হাসপাতালেও সেবার পরিধি বাড়িয়েছি। ১০ হাজার চিকিৎসক, ১৫ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দিয়েছি। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা চালু রেখেছি। আমরা চাই আমাদের দেশের কোনো রোগী যাতে বিদেশে যেতে না হয়। এজন্য প্রাইমারি, সেকেন্ডারিসহ সব হাসাপাতালে সেবার মান বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ভবন বানাচ্ছি, যন্ত্রপাতি দিচ্ছি। লোকবল নিয়োগ দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের শুনতে হয় হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। যন্ত্রপাতি কাজ করে না। আমি চাই সবাই উপস্থিত থাকুক। হাসপাতালের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকুক, মেশিনপত্র যেন চালু থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ওসেক সেবা চালুর মাধ্যমে রোগীদের ভিড় কমে আসবে। দ্রুত সময়ে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

ওসেক প্রকল্পের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক ( প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, এক ছাদের নিচে ইমার্জেন্সি রোগীর অত্যাধুনিক সব সেবা দেওয়ার একটি উদ্যোগ। প্রথম পর্যায়ে আমরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসাপাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, মিডফোর্ড হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মডেল হিসেবে চালু করেছি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউএসএইড আমাদের সহায়তায় করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে আইএফআরসি ও বিডিআরসিএস।

তিনি বলেন, আপনারা দেখবেন রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকদের যত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে সেটা কিন্তু ইমার্জন্সি সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট নিয়েই হয়ে থাকে। আমাদের যদি প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী ইমার্জেন্সী সার্ভিস থাকে তাহলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। প্রথম পর্যায়ে আমরা চারটি হাসপাতাল মডেল হিসেবে নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা হবে।

ওসেক চিকিৎসা জগতে নবদিগন্তের সূচনা করবে। এ সেবার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও শক্তিশালী করতে পারবো। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো ওসেককে অর্থবহ করে তুলতে হবে। এখান থেকে অধিকাংশ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন শেষ হয়। আমরা আধুনিক ও প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি। যদি ব্যবহার করা যায় তাহলেই ওসেককে অর্থবহ করা যাবে। ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবিলা করতে আমাদের গত দুটি বছর কেটে গেছে। আমরা আপনাদের কথা দিচ্ছি আগামী এক বছর স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবির বলেন, স্বাস্থ্য সেবায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সাধারণ মানুষের জন্য আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কোভিডের সময় আমাদের এখানে ২০ হাজার ২৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। কোভিডকালে প্রায় ৯৩ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছে। অন্যত্র পাঠাতে হয়েছে ৩ দশমিক ৮৭। মৃত্যু হয়েছে মাত্র তিন শতাংশ রোগী। ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩৫ জন।। একদিনের ক্যাম্পেইনে ২১ হাজার ৩৯৮ জন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ২৬ বেডের সিসিইউ আমরা প্রস্তুত করেছি। এখানে ডাক্তার ও নার্স দেওয়া গেলে আমরা চালু করতে পারবো। আমাদের ২৫ বেডের একটা এইচডিইউ আছে। লোকবল পেলে সেটা চালু করতে পারবো। সেক্ষেত্রে আমাদের ১০ বেডের আইসিইউকে ২০ বেডে উন্নতি করতে পারবো। আমাদের ১৬টি অপারেশন থিয়েটার (ওটি) রয়েছে। তার মধ্যে চারটি চালু রয়েছে। লোকবল পাওয়া গেলে ১৬টি ওটি ই চালু করা সম্ভব হবে। ৫০০ বেডের লোকবলসহ সংকটগুলো কেটে গেলে আমরা আরও ২০০ বেড বাড়াতে পারবো।

তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসক ও নার্সদের রাত্রিকালীন যাতায়াতে আক্ষেপ রয়েছে। এজন্য দুটি মাইক্রোবাস ও মিনিবাস দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফসানা আলমগীরেরর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা ১৮ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাবিব হাসান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাইদুর রহমান, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাশিদা আক্তার এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ কান্ট্রি হেড সানজিদ কুমার কাফলে প্রমুখ।

এএএম/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।