বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে আরডিএম প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) অর্থায়নে চলমান রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) প্রকল্প দেশে-বিদেশে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। একই সঙ্গে একে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যখাতে একটি মাইলফলক বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি)।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আরডিএম প্রকল্পেন সমাপ্তি অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশে প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ আরডিএম। এর কার্যক্রম সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। ইউএসএআইডির অর্থায়নে ২০১৭ সালের মে মাসে শুরু হওয়া আইসিডিডিআর,বির আরডিএম উদ্যোগ, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিগত ছয় বছরে আরডিএম প্রকল্পের মাধ্যমে মাতৃ, নবজাতক এবং শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং যক্ষ্মার রোগের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য পলিসি ব্রিফ কৌশলপত্র এবং জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রমাণভিত্তিক নলেজ প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়েছে।

প্রকল্পটির সফলতা তুলে ধরে বলা হয়, এ প্রকল্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদানের মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ কিশোর স্বাস্থ্য ও সুস্থতা জরিপ ২০১৯-২০, বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ফ্যাসিলিটি জরিপ করা হয়েছে। এছাড়া আরডিএস ১৮টি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা প্রকল্পও পরিচালনা করেছে, যা কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিবার পরিকল্পনার মতো বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করেছে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ইউএসএআইডির সহায়তা আরডিএমের সাফল্যের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। আরডিএম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অন্যান্য দেশগুলো জন্য তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অগ্রগামী করার জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পটি স্বাস্থ্য পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কাঠামো এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ক সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় গবেষণা থেকে তথ্যপ্রমাণ সরবরাহ করে সফলতা অর্জনে সহায়তা করছে। আরডিএস স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণ এবং সুশাসন অর্জনে প্রভাব রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নবজাতক মনিটরিং চেকলিস্ট এবং শিশুদের যক্ষ্মা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় নির্দেশিকা।

এছাড়া আরডিএম স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দেশীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। প্রকল্পটি ২ দশমিক ৩৮ জন অংশগ্রহণকারীকে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করেছে। আটজন তরুণ গবেষককে পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণে সহায়তা করেছে এবং ২৩ জন প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটরকে গবেষণায় সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছে আইসিসিডিআর,বি। এসব কার্যক্রম স্থানীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা প্রস্তাব, পরিচালনা এবং এর ফলাফল ব্যবহার করার সক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিডিডিআর, বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএসএআইডিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের ট্রান্সলেশনাল গবেষণার ইতিহাস অনেক পুরোনো। আমাদের অনেক গবেষণা বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্রহণ করেছে, যা লাখ লাখ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ,টিটেনাস টক্সয়েড টিকা এবং খাবার স্যালাইনের মতো গবেষণাগুলো। আমরা ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজ চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইউএসএআইডি-র জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক অফিসের ডেপুটি অফিস ডিরেক্টর মিরান্ডা বেকম্যান বলেন, আমাদের প্রমাণভিত্তিক প্রোগ্রাম নেওয়া দরকার। প্রতিটি সিদ্ধান্তই হওয়া উচিত বিজ্ঞানসম্মত এবং গবেষণা থেকে। অর্থাৎ গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে। আরডিএম যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণালব্ধ তথ্য তুলে ধরেছে। আমি আশা করি, এ গবেষণালব্ধ ফলাফল সরকার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যখাতের অংশীদারদের জন্য সহায়ক হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা প্রায়ই প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলি। কিন্তু অনেক সময় আমরা প্রমাণ উপেক্ষা করি এবং আমরা যা করতে অভ্যস্ত তা চালিয়ে যাই। আমি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকার সময়ে আইসিডিডিআর, বি-র গবেষণা গবেষণালব্ধ ফলাফল কাজে লাগিয়েছি। এ সময় তিনি সরকারের কর্মকর্তাদের এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান।

এএএম/এমএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।