সফলভাবে আরও একজনের বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করলো বিএসএমএমইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৯ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি এ হাসপাতালে তৃতীয় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট। বিএসএমএমইউয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ জানান, বর্তমানে রোগী সুস্থ আছেন।

এ বিষয়ে বুধবার (৩ এপ্রিল) বিএসএমএমইউতে সংবাদ সম্মেলন করে কর্তৃপক্ষ। এতে উপস্থিত ছিলেন নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মাদ নূরুল হক।

তিনি বলেন, সিএমএইচ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সেবা চালু আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও উন্নতমানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সেবা দেওয়া হচ্ছে। মাত্র তিন লাখ টাকার মধ্যে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

দেশের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হবে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, রোগীরা এখানে এসে যাতে বিশ্বের সর্ব উৎকৃষ্ট চিকিৎসাসেবা পান তা নিশ্চিত করা হবে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টারে প্রত্যেক মাসে যাতে কমপক্ষে পাঁচজন রোগীকে এই সেবা দেওয়া যায় তাও নিশ্চিত করা হবে।

হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ উদ্দিন শাহ বলেন, বর্তমান সময়ে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন রক্ত রোগের আধুনিকতম চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম। সারা পৃথিবীতে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েলোমাসহ রক্তের ক্যাল্লার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। লিউকেমিয়াসহ রক্তের ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন।

তিনি বলেন, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রক্রিয়া মূলত দুই ধরনের। এলোজেনিক বোনম্যারে ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রক্রিয়ায় রোগীর নিকটাত্মীয় বা অন্য দাতার শরীর থেকে স্টেম সেল, বোনম্যারো সংগ্রহ করা হয়। রোগীকে উচ্চমাত্রার কেমোথেরাপি, ক্যানসারের ওষুধ এবং দাতার শরীর থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল, বোনম্যারো রোগীর দেহে টিকে থাকার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে ওষুধ দেওয়া হয়। এরপর রোগীর দেহে দাতার শরীর থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল ও বোনম্যারো প্রবেশ করানো হয়।

অপরদিকে অটোলগাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রক্রিয়ায় রোগীর দেহে উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি বা ক্যানসারের ওষুধ দেওয়ার আগেই রোগীর শরীর থেকেই স্টেম সেল (শরীরের স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদনক্ষম কোষ) নির্দিষ্ট মাত্রায় সংগ্রহ করা হয়। এরপর রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয় উচ্চ মাত্রার কেমোথেরাপি বা ক্যানসারের ওষুধ। ফলে শরীরের ক্যানসারের কোষগুলো আরও গভীরভাবে নির্মূলের আশা করা হয়। তবে এর পাশাপাশি স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদনের কোষগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয় মারাত্মকভাবে। তখন আগে সংগ্রহ করা রক্ত উৎপাদনে সক্ষম স্টেম সেলগুলো পুনরায় শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ফলে পুনরায় স্বাভাবিক রক্তের কোষ তৈরি হয়।

কেমোথেরাপি, ক্যানসারের ওষুধ প্রয়োগ এবং উৎপাদনক্ষম কোষ থেকে পুনরায় স্বাভাবিক রক্তের কোষ তৈরি হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে শরীরে রক্ত কোষের সংখ্যা অত্যন্ত কম থাকে। ফলে এ সময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রক্তকোষের সংখ্যা কম থাকায় এসময় দুর্বলতা, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম হওয়ার কারণে রোগীকে আলাদা কক্ষে অবস্থান করতে হয়।

এ কক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সংক্রামক রোগের সম্ভাবনা কমাতে এ কক্ষে বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখতে হয়। কেমোথেরাপি ও ক্যানসারের ওষুধ প্রয়োগ করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি, বমিভাব, মুখে ঘা, ব্যথা, খাবারে স্বাদ পরিবর্তন, পাতলা পায়খানা, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, চুল পড়ে যাওয়া, পেট ব্যথা, চামড়ার সমস্যা, দুর্বলতা এসব দেখা যেতে পারে। ফলে ওষুধ ও অন্যান্য উপায়ে এ সমস্যাগুলো কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।

পাশাপাশি সংক্রমণ হ্রাসের লক্ষ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রোগীকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকবিরোধী ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু সব রকম সতর্কতা সত্ত্বেও চিকিৎসার যে কোনো পর্যায়ে সংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন রকম ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি এ সময়ে রোগীকে রক্ত বা রক্তের উপাদান দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। উৎপাদনক্ষম কোষগুলো থেকে পুনরায় স্বাভাবিক রক্তের কোষ তৈরি হতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পুনরায় তৈরি হওয়ার পর রক্তের কোষগুলো নির্ধারিত মাত্রায় পৌঁছানো পর্যন্ত রোগীকে ভর্তি থাকতে হয়।

ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রক্রিয়া চলাকালীন চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে। জটিলতা সমূহের চিকিৎসা করার পরও যদি তা নিয়ন্ত্রণে না আসে তবে তা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে বলে জানান অধ্যাপক ডা. সালাহ উদ্দিন শাহ।

তিনি বলেন, চিকিৎসা সম্পন্ন করার পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে রোগীকে প্রথম ১০০ দিন নিয়মিত ফলোআপে রাখতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। মাল্টিপল মায়েলোমা, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমার ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে রোগটিকে দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে রাখার আশা করা যায়। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও পুনরায় ক্যানসারের আবির্ভাবের সম্ভাবনা থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার. জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমানসহ আরও অন্যান্য চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এএএম/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।