দেশজুড়ে

‘বাড়িঘর সব পদ্মা নদী লইয়া যাইতেছে, আমার কোনো ঈদ নাই’

‘বাড়িঘর সব পদ্মা নদী লইয়া যাইতেছে, আমার কোনো ঈদ নাই’

শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম। শুক্রবার (৬ জুন) রাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়ি যান। তবে এবার তার ঈদ কেটেছে উৎকণ্ঠায়। ঈদের আনন্দ এক নিমিষেই ম্লান করে দিয়েছে নদী ভাঙন। ঘরবাড়ি সরাতে গিয়ে পড়তে পারেননি ঈদের নামাজও। আর এমন অবস্থায় আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো পরিবারে।

Advertisement

শুধু মোহাম্মদ সেলিম নয়, তার মতো আরও অনেক পরিবারের দিন কাটছে আতঙ্কে। কারণ জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে বাঁধটির অন্তত আড়াইশো মিটার অংশ ধসে পড়েছে। অনেকে সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাসস্থান। ভাঙন ঠেকানো না গেলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ শতাধিক ঘরবাড়ি।

দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের। আর ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আর এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা।

Advertisement

গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো তলিয়ে যায় পানিতে। এছাড়া এলাকার আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।

গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল তা দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশের নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো দুই কিলোমিটার রক্ষা বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে শনিবার (ঈদের দিন) ভোররাতে সংস্কার করা বাঁধের ১০০ মিটার অংশসহ পাশের আরও একটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়। একদিনের মধ্যে বাঁধের আড়াইশো মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়।

মোহাম্মদ সেলিম বলেন, গতকাল ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরেছি। ভোর রাতেই ভাঙন শুরু হয়। এবার পরিবারের সঙ্গে আর ঈদ করা হলো না। আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছি। এখন কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না।

Advertisement

ভাঙনের শিকার হওয়া দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজকে ঈদের দিনেও আমার ঈদ নাই। আমার বাড়িঘর সব পদ্মা নদী লইয়া যাইতেছে। ঘরবাড়ি সরাইয়া সারতে পারছি না। আমি খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। অতি তাড়াতাড়ি এই জায়গায় যদি বস্তা না ফেলা হয় তাহলে পুরো এলাকা নদীগর্ভে চলে যাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা শেখ বলেন, কয়েক বছর ধরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে এসেছে। আজ ভাঙনের ফলে রক্ষা বাঁধের দুটি স্থানে অন্তত আড়াইশো মিটার বাঁধ ধসে গেছে। আমরা চাই নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি শক্ত একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।

মাঝিরঘাট বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, আমাদের এই বাজারে ২০০ দোকান আছে। পাকা ঘর। আমাদের এগুলো সব ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারের কাছে দাবি, দ্রুত ভাঙন ঠেকানো হোক।

এদিকে ধসে পড়া বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। আর দ্রুত বাঁধটির ভাঙনে ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিকের।

তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়ে ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিধান মজুমদার অনি/জেডএইচ/জেআইএম