দেশজুড়ে

‘চামড়া পাচারের রুট’ চিহ্নিত করে কড়া পাহারায় বিজিবি

‘চামড়া পাচারের রুট’ চিহ্নিত করে কড়া পাহারায় বিজিবি

ঢাকার পর দেশে পশুর চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম যশোরের রাজারহাট। সেখানে দুই শতাধিক আড়তে ২১ জেলার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ মোকামের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা তুলনামূলক কম অথচ চামড়ার নিম্নদর নির্ধারণ, লবণের দামবৃদ্ধি, ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা আর বকেয়া পরিশোধে টালবাহানার কারণে কোরবানির পশুর চামড়া ভারতে পাচারের আশঙ্কা করছেন যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় চামড়া পাচার রোধে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

Advertisement

যশোরের শার্শা উপজেলার ১০২ কিলোমিটার সীমান্তের শিকারপুর, কাশিপুর, রঘুনাথপুর, বেনাপোলের পুটখালি, দৌলতপুর, সাদিপুর, ঘিবা, গোগা, রুদ্রপুর, অগ্রভুলোট, পাঁচভুলোট, দাদখালি সীমান্তকে কোরবানির পশুর ‘চামড়া পাচারের রুট’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘ব্যাপক হারে এবার চামড়া পাচার হতে পারে’ ব্যবসায়ীদের এমন আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে সীমান্তরক্ষীদের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব।

বেনাপোলের চামড়া ব্যবসায়ী মনির হোসেন, বাগআচড়ার শেখ সহিদুল ইসলাম, শার্শার মোসলেম আলি ও নাভারনের ইয়াকুব আলি বলেন, সরকার চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের ঋণ দিলেও সেই অর্থের পুরোটা তারা ব্যয় করেন না। এছাড়া স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা ঋণ পান না। কোরবানির সময় তাদের হাতে টাকা থাকে না। ফলে ‘সিন্ডিকেট করে’ চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। তখন বেশি দামের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেছে নেন সীমান্তের চোরাই পথ।

শার্শার চামড়া ব্যবসায়ী মোসলেম আলি বলেন, পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ীদের পুঁজি সংকটের সুযোগ নেয় চোরাকারবারিরা। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে তারা বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করে। পরে সুযোগ বুঝে পাচারকারীদের কাছে সেই চামড়া তুলে দেয়।

Advertisement

বেনাপোলের দক্ষিণাংশের সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।

খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ খুরশীদ আনোয়ার বলেন, কোরবানির চামড়া পাচার হওয়ার এবার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ দৌলতপুর, পুটখালি, গোগা রুদ্রপুর, দাদখালি, পাঁচভুলোট ও অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতি নদী দিয়ে চামড়া পাচারের শঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখে বাড়তি সতর্কতা, বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোসহ নদীতে টহলের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া ও শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম রবিউল ইসলাম জানান, সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পাশাপাশি সীমান্ত অভিমুখে চামড়াবোঝাই যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী পুলিশ ফাঁড়িগুলোকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকীও।

Advertisement

গত শুক্রবার (৬ জুন) সকালে যশোরের বেনাপোল বিজিবি কোম্পানি সদরে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিজিবি। সেখানে বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়ে যেতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বিজিবি। যশোরের সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের সম্ভবনা খুবই কম। তারপরও আমরা সতর্ক আছি। সীমান্তের সব বিওপি ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঈদের দিন বিকেল থেকে অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মো. জামাল হোসেন/এফএ/জেআইএম