ভ্রমণ

ঈদের ছুটিতে এক বিকেলে ঘুরে আসুন বিমানবাহিনী জাদুঘর

ঈদের ছুটিতে এক বিকেলে ঘুরে আসুন বিমানবাহিনী জাদুঘর

তানজিদ শুভ্র

Advertisement

ইট-পাথর আর কংক্রিটের এই ব্যস্ত নগরে নিজের জন্য খুব কম সময়ই পাওয়া যায়। ঢাকার ভেতরে ঘুরার মতো জায়গা কম নয়, তবে অল্প সময়ে পরিবার কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য যদি একটু ভিন্ন স্বাদের কোনো জায়গা খুঁজে থাকেন, তাহলে এক বিকেলে ঘুরে আসতে পারেন বিমানবাহিনী জাদুঘর থেকে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এই জাদুঘর কেবল যুদ্ধবিমানের প্রদর্শনী নয়, বরং একটি জীবন্ত দলিল যেখানে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের আকাশপথের বীরত্বগাথা। বর্তমানে জাদুঘরটি হয়ে উঠেছে এক আধুনিক পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্র। যেখানে আকাশপথের বীরত্বগাঁথার পাশাপাশি রয়েছে খোলা মাঠ, শিশুদের রাইড ও লেক।

২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী পরিচালিত এই জাদুঘর। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পাশে মনোরম এক পরিবেশে এই জাদুঘর অবস্থিত। জাদুঘরের প্রবেশমুখেই চোখে পড়বে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং প্রশিক্ষণ বিমানের সারি। যা নিছক মডেল নয় বাস্তবিকই ব্যবহৃত যন্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে এফটি-৫, মিগ-২১, জি নাট, এফ৬, এ৫-১১১। আরও রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান ‘বলাকা’ এবং প্রশিক্ষণ বিমান এল-৪০১ ও এল-৩৫০। এছাড়া ভারতীয় বিমানবাহিনী থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে দেওয়া উপহার হান্টার বিমান রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ধ্বংসাবশেষ কতিপয় যন্ত্রপাতিও দেখা যায় এই জাদুঘরে।

Advertisement

দুটি বিমানে দর্শনার্থীরা সরাসরি উঠে ভেতরের কাঠামো দেখতে এবং ড্রাইভিং হুইলে হাত রাখার সুযোগ পান। যা শিশু-কিশোরদের কাছে রীতিমতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। প্রথম যাত্রীবাহী বিমান ‘বলাকা’তে ৩০ টাকার বিনিময়ে ঘুরে দেখা যায় ককপিট অবধি।

জাদুঘরের বাইরের অংশটিই যেন আরেকটি নতুন অভিজ্ঞতা। দু'পাশে বিমান সাজিয়ে রাখা আর মাঝে পথ ধরে প্রিয়জনের সঙ্গে হাত ধরে হাঁটে যাওয়া অথবা পরিবারগুলো দল বেঁধে চলতে থাকে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ও নীল আকাশের সমারোহ যেন ক্লান্ত নগরবাসীর কাছে একটুখানি মুক্তির প্রশান্তি।

বিশেষ করে ঈদের সময় কিংবা বিশেষ ছুটির দিনে বিকেল গড়াতে না গড়াতেই এখানে মানুষের ঢল নামে। ছোটদের বিনোদনের জন্য রয়েছে একাধিক আকর্ষণীয় রাইড, নাগরদোলা, ট্রেন, কার রাইড প্রভৃতি। কিছু রাইড বড়রাও উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া আছে একটি ছোট লেক; যেখানে নৌকাভ্রমণের সুযোগও রয়েছে। প্রতিটি রাইড বা বোটের জন্য নির্ধারিত মূল্যে টিকিট কিনতে হয়। জাদুঘরে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।

ভ্রমণ মানেই তো খাওয়া-দাওয়া। খাওয়ার জন্য এখানে রেস্তোরাঁ সন্ধান মিলবে; যেখানে বসে পরিবারের সঙ্গে খেতে পারবেন। ভেতরে চা-কফি আড্ডা দেওয়ার মতো জায়গাও খুঁজে পাবেন হাঁটতে হাঁটতে। এয়ারক্রাফটের মাঝেই রয়েছে আরেক নান্দনিক ক্যাফে। সেখানে প্রবেশ করতে আপনাকে শুরুতে ১০০ টাকা মূল্যের একটি টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।

Advertisement

আপনার যদি স্ট্রিট ফুডে খুব আগ্রহ থাকে; তবে মিউজিয়াম থেকে বের হলেই আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিম ও কোমল পানীয়ের মতো জনপ্রিয় খাবার পেয়ে যাবেন। তবে সঙ্গে বাচ্চা থাকলে খাবার পানি বহন করাই উত্তম।

সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ।

মেট্রোরেলের সুবাধে খুব সহজেই এই স্থানে আসতে পারবেন যে কেউ। মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে নামলেই বিমানবাহিনী জাদুঘরের দেখা মিলবে। এছাড়া বাসে কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতেও চলে আসতে পারেন মনোরম দৃশ্যের এই স্থানে এক বিকেল রঙিন স্মৃতি জমাতে।

এমআইএইচ/এমএস