দেশজুড়ে

কলকাতায় নিহত সাবেক এমপি আনারের কোটি টাকার গাড়ি মিললো কুষ্টিয়ায়

কলকাতায় নিহত সাবেক এমপি আনারের কোটি টাকার গাড়ি মিললো কুষ্টিয়ায়

কুষ্টিয়া শহরের এক বহুতল ভবনের পার্কিং স্পেসে একটি বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ির সন্ধান মিলেছে। কোটি টাকা দামের গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিহত আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে ধারণা পুলিশ ও স্থানীয়দের।

Advertisement

গাড়িটির সন্ধান পেয়ে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে সোমবার (৯ জুন) দিনগত রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের ৮ তলা বিশিষ্ট সাফিনা টাওয়ার নামের ভবনের গ্যারেজে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি পাওয়া যায়। গাড়ির ভেতর থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করেছে পুলিশ। কালো রঙের গাড়িটির নম্বর- ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০।

কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই স্বপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গাড়ির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হবে।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, তারা গাড়িটির খবর পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গাড়িটি পায়। পুলিশ গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করেছে। গাড়িটা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাগজপত্রে তার নাম রয়েছে। গাড়িটি বেশ কয়েকমাস আগে থেকে বাড়ির গ্যারেজে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির বলেন, আমরা প্রথমে শুনতে পাই যে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি রাখা আছে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে। পরে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। সংসদ সদস্যের স্টিকার উদ্ধার করেছে। এই গাড়ির চালক কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়িচালক ছিলেন একসময়। তিনিই গাড়ি থেকে কাগজপত্র ও স্টিকার দেন পুলিশকে। কাগজপত্র দেখে বোঝা যায় যে, গাড়ির মালিক ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ হোসাইন বলেন, সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আমরা একটি খবর পাই যে সাফিনা টাওয়ারে একটি গাড়ি আছে। ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি কয়েকমাস ধরে রাখা আছে। বের করা হয় না, মাঝেমধ্যে স্টার্ট দেওয়া হয়। পরে আমরা সাফিনা টাওয়ারের নিচে গ্যারেজে গিয়ে দেখি অনেক দামি গাড়িটা। গাড়ির ড্রাইভার আমাদের দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। পরে ড্রাইভার একজনকে কল দেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু উনি কোনো তথ্য দেননি। পরে পুলিশের টিম আসে ও গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করে। গাড়ির কাগজপত্র লাইসেন্স এসব দেখে জানতে পারি গাড়িটা আনার এমপির। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক। এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। যারা এই গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে দ্রুত।

স্থানীয়রা বলেন, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটি সিগারেট কোম্পানি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ভাড়া নিয়েছেন। তারাই গাড়িটি রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এই গাড়ি কয়েকমাস ধরে এখানে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।

Advertisement

ওই ভবনের কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটি সিগারেট কোম্পানি কয়েকটি তলা ভাড়া নিয়েছে। সেখানে ফরেনাররা আসেন, থাকেন ও খাওয়াদাওয়া করেন৷ তারাই গাড়িটি রাখার ব্যবস্থা করেছেন।

গাড়িচালক শান্ত বলেন, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলাম। এখন আর নাই। আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করি। জিএম বেলাল স্যার ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন। জেনুইন লিফ টোব্যাকোর বেলাল ও জাহিদ স্যারের হুকুমে আমি গাড়ি স্টার্ট দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, গাড়ির মালিক কে, তা আমি জানি না। বেলাল স্যার আর জাহিদ স্যার সবকিছু জানে। তাদের হুকুমে গাড়ি স্টার্ট দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গাড়ি থেকে পুলিশ কাগজপত্র, লাইসেন্স ও স্টিকার উদ্ধার করেছে। সেখানে গাড়ির মালিকের নাম লেখা আছে। এই গাড়িটি আমি কখনো রাস্তায় চালাইনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনের নিরাপত্তাপ্রহরি বলেন, উনারা গাড়ি এনে রাখেন। আমি জানি না যে গাড়িটা কার। আজ শুনছি গাড়িটা এক এমপির৷ সিগারেট কোম্পানির অফিসের স্যাররা এই গাড়িটি রেখেছে বেশ কয়েক মাস আগে। গাড়ি বাইরে বের করা হয় না সেভাবে। তবে মাঝেমধ্যে স্টার্ট দেওয়া হয়। চালক শান্ত গাড়িটা স্টার্ট দেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাফিনা টাওয়ারের মালিক, জেনুইন লিফ টোব্যাকোর সিইও জাহিদ ও জিএম বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অফিসে গিয়ে কেয়ারটেকার ও দারোয়ানকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি৷

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা পত্রে আনোয়ারুল আজীম আনারের নাম উল্লেখ রয়েছে। সাফিনা টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়ার চুক্তিপত্র অনুযায়ী মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মো. মুস্তাফিজুর রহমান ভবনের তিনটি ইউনিট ও তিনটি গাড়ির পার্কিং স্পেস ভাড়া নেন। গাড়িটি বর্তমানে মুস্তাফিজুর রহমানের পার্কিং স্পেসে রয়েছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভাড়া নিয়েছেন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমান কুষ্টিয়ার দশ মাইল এলাকায় অবস্থিত ‘তারা টোবাকো’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গাড়িটি কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের। তবে গাড়িটির মালিকানার বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে কারা কীভাবে গাড়িটি এখানে নিয়ে এসে রেখেছে সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

আল-মামুন সাগর/এমএন/জেআইএম