মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, গণমাধ্যমের কাজ সত্য তুলে ধরা। এটা যেন স্বার্থান্বেষী মহলের হাতিয়ার না হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে।
Advertisement
দেশি-বিদেশি প্রায় ১ হাজার গণমাধ্যমকর্মীর অংশগ্রহণে শনিবার রাজধানী কুয়ালালামপুরের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাংবাদিক দিবস উপলক্ষে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘নোয়াম চমস্কির মতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও আসে যেমন ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট’ বা সম্মতি তৈরি করার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, শক্তির উপকরণ ব্যবহার করে এমন এক বয়ান তৈরি করা হয়, যা মানুষকে না চাইলেও মেনে নিতে বাধ্য করে।’
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের অবশ্যই পেশাদারত্ব ও নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সমাজকে তথ্যজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা গুজব, অপপ্রচার বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিতে না পড়ে।
Advertisement
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, আপনারা যেন ‘ভিন্নমত তৈরির শিকার না হন অর্থাৎ যারা ঘৃণা, অপমান ও অপবাদ ছড়িয়ে অন্যের চরিত্রহনন করে বিশেষ স্বার্থ হাসিল করতে চায়। মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য, কিন্তু মানুষকে অপমান করা, মিথ্যা প্রচার চালানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেমনটা টমাস জেফারসন বলেছিলেন গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরতন্ত্র মেনে নেওয়া যায় না, তেমনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের দমনও নয়।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারসম্যের বিষয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারসাম্য থাকতে হবে। শাসক গোষ্ঠী, জাতিগত উগ্রবাদী কিংবা ক্ষমতালোভী গোষ্ঠীর ‘ভিন্নমত তৈরির হাত থেকে যেন সমাজ মুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আজকের বাস্তবতায় চ্যালেঞ্জ কেবল মূলধারার গণমাধ্যম নয়, বড় চ্যালেঞ্জ এখন সামাজিক মাধ্যমে। কারণ এটি অনেক বেশি মুক্ত, দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত। আমাদের এখনকার মূল চ্যালেঞ্জ হলো এই স্বাধীনতাকে কীভাবে সর্বোচ্চ ভালো কাজে লাগানো যায়। তথ্য যেন নির্ভরযোগ্য হয়, সত্যভিত্তিক হয় এবং কোনোমতেই যেন নিপীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা যত শাসকশ্রেণিই হোক কিংবা ক্ষমতার আশায় মরিয়া কোনো গোষ্ঠী।
তিন দিনব্যাপী দেশি-বিদেশি প্রায় ১ হাজার গণমাধ্যমকর্মী অংশগ্রহণে এবারের হাওয়ানা সম্মেলনের ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল সাংবাদিকতার নতুন যুগে প্রবেশ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলিঙ্গন, নৈতিকতা রক্ষা।
এবারের হাওয়ানা সম্মেলনে, মালয়েশিয়ায় মে মাসের ২৯ তারিখে ‘জাতীয় সাংবাদিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে ১৯৩৯ সালের ২৯ মে প্রথম ‘উতুসান মেলায়ু’ পত্রিকার প্রকাশের ঐতিহাসিক দিন হিসেবে। এর মাধ্যমে দেশটির গণমাধ্যম অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সব সাংবাদিক ও কর্মীদের অবদানকে সম্মান জানানো হচ্ছে।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন, গণমাধ্যম সংস্থাগুলোকে ডিজিটাল রূপান্তর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানকে আলিঙ্গন করতে সরকার ৩০ মিলিয়ন রিঙ্গিত বরাদ্দ করা হয়েছে।
এমআরএম/জেআইএম