সোনার দামে রেকর্ড, গহনা ছেড়ে বার-কয়েনে ঝুঁকছেন ক্রেতারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩০ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
সোনার গহনা ছেড়ে বার-কয়েনে ঝুঁকছেন ক্রেতারা/ ফাইল ছবি: জাগোনিউজ, পেক্সেলস

সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোয় বদলে যাচ্ছে ক্রেতাদের অভ্যাস। ভারতে উৎসব এলেই গহনা কেনা ছিল দীর্ঘদিনের রেওয়াজ, সেখানে এখন অনেকেই ঝুঁকছেন সোনার বার ও কয়েনের দিকে।

মুম্বাইয়ের গৃহিণী প্রচি কাদাম প্রায় দুই দশক ধরে প্রতিটি উৎসবেই সোনার গহনা কিনতেন। তবে চলতি বছরের রেকর্ড দামের কারণে তিনি গলার হার বা চুড়ির বদলে ১০ গ্রাম ওজনের একটি সোনার কয়েন কিনেছেন। প্রচি কাদামের কথায়, ‘গহনা পরা যায়, তা ঠিক। কিন্তু বানানোর খরচ হিসেবে অতিরিক্ত প্রায় ১৫ শতাংশ দেওয়া এখন আর যুক্তিসংগত মনে হয়নি। তাই এবার কয়েনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।’

এমন সিদ্ধান্ত শুধু তার একার নয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সোনার বাজার ভারত। দেশটিতে সোনা গত ৪৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধির পথে থাকায় ক্রেতারা গহনার বদলে ছোট বার ও কয়েন কেনার দিকেই বেশি ঝুঁকছেন।

বিশ্ববাজারে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে চাহিদা বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানো এবং মার্কিন ডলারের দুর্বলতার কারণে চলতি বছর সোনার দাম প্রায় ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর প্রতি ট্রয় আউন্স সোনার দাম দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৪৯ দশমিক ৭ ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

একই সময়ে ভারতে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ, যেখানে নিফটি ৫০ সূচকের বৃদ্ধি মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে রুপির প্রায় পাঁচ শতাংশ দরপতনও সোনার দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

দামের চাপে বদলাচ্ছে কেনার ধরন

বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা সামগ্রিক চাহিদা বড় ধাক্কা খাওয়া থেকে কিছুটা রক্ষা করছে এবং ২০২৬ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। অনেকেই পুরোপুরি গহনা কেনা বন্ধ না করে কম ওজনের ডিজাইনের দিকে ঝুঁকছেন।

কলকাতার নিবেদিতা চক্রবর্তীর পরিবারের বাজেট সোনার দামের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। তাই তিনি হালকা ডিজাইনের গহনা বেছে নিচ্ছেন। তার কথায়, ‘একটি হার থেকে ৬–৭ গ্রাম ওজন কমালেই এক লাখ রুপির বেশি সাশ্রয় হয়।’

পি এন গ্যাডগিল জুয়েলার্সের চেয়ারম্যান সৌরভ গ্যাডগিল জানান, ক্রেতারা এখন নকশা ও দামের দিক থেকে বেশি সচেতন। গত জুন মাসে তাদের প্রতিষ্ঠান হালকা ও কম ক্যারেটের গহনার জন্য নতুন সাব-ব্র্যান্ড চালু করেছে। তার কথায়, ‘ক্রেতারা এমন গহনা চান, যাতে সোনার মালিক হওয়া যায় কিন্তু দামের চাপ না পড়ে। আধুনিক কারুশিল্প হালকা গহনাকেও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।’

ডিপি অভূষণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সন্তোষ কাটারিয়াও জানান, কম ক্যারেট ও হালকা গহনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ ও কর্মজীবী ক্রেতাদের মধ্যে। তার কথায়, ‘১৮ ক্যারেট বা ১৪ ক্যারেটের গহনা বাজেট সামলাতে সাহায্য করে, আবার নকশার দিক থেকেও আকর্ষণীয়—দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যা উপযোগী।’

দাম আরও বাড়বে, কমবে চাহিদা

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ভারতে মোট সোনার চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে গহনার চাহিদা ২৬ শতাংশ কমে ২৭৮ মেট্রিক টনে নেমেছে, বিপরীতে বিনিয়োগ খাতে চাহিদা বেড়েছে ১৩ শতাংশে, যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ টনে। মোট চাহিদার ৪০ শতাংশই এসেছে বিনিয়োগ থেকে, যা রেকর্ড এবং ভারতীয় পরিবারগুলোর কাছে সোনার সম্পদমূল্য হিসেবে গুরুত্ব তুলে ধরে।

ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পৃথ্বীরাজ কোঠারি মনে করেন, ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই ধারা চলবে। তার মতে, ‘ক্রেতারা ধরে নিচ্ছেন সোনার দাম আরও বাড়বে। তাই তারা কয়েন, বার বা সোনাভিত্তিক ইটিএফে (এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডস) বিনিয়োগ করছেন।’

চলতি বছর ভারতে তালিকাভুক্ত সোনাভিত্তিক ইটিএফে বিনিয়োগ এসেছে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২৮ দশমিক ৭ টনের সমান। এতে এসব তহবিলের মোট ধারণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ২ টনে।

মেটালস ফোকাসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালেও ভারতে গহনার চাহিদা কম থাকবে এবং পুরো বছরে তা আরও নয় শতাংশ কমতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।