যেভাবে বিধ্বস্ত হলো ‘একেবারে নতুন’ বিমানটি (ভিডিও)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০০ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের পরপরই জাভা সাগরে ১৮৯ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে লায়ন এয়ারের একটি বিমান। সোমবার সকালের দিকে জাভা সাগরে বিধ্বস্ত এই বিমানের কোনো আরোহীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। দেশটির উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করা গেলে সেটি ‘অলৌকিক’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত বিমানের আরোহীদের লাগেজ, পরিচয়পত্র ও অন্যান্য সামগ্রী গভীর সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাইলট ভায়ি সুনেজা সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে জাকার্তা বিমানবন্দর থেকে ১৮৯ আরোহী নিয়ে বিমানটি উড্ডয়ন করেন।

উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে বিমানটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে বিমানটিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার অনুমতি চাইলেও পাইলট তা পাননি।

LION-AIR

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানটি একেবারে নতুন ব্র্যান্ডের। নতুন ব্র্যান্ডের একটি বিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পুরো বিশ্বের নজর এখন ইন্দোনেশিয়ায়। নতুন ব্র্যান্ডের বড় ধরনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাও এটি প্রথম।

বিমান বিধ্বস্তের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিমান বিধ্বস্তের কারণও পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাওয়া যাবে না।

তবে যান্ত্রিক ও মানবিক কিছু সমস্যার কারণে মাঝে মাঝেই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই বিমানটি একেবারে নতুন হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটির কোনো একটি অংশ কাজ করেনি। ২০১৭ সাল থেকে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়।

LION-AIR

লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, ইন্দোনেশিয়ায় গত জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো এই বিমানের চলাচল শুরু করতে পারায় তারা খুবই গর্বিত ছিল। আরো অন্তত ২১৮টি ইউনিটের জন্য তারা নতুন করে অর্ডার দিয়েছিল।

তবে সোমবার দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানটির যাত্রা শুরু হয় গত ১৫ আগস্ট। দেশটির জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কমিশনের প্রধান সোয়েরজান্ত জাহজ্যানো বলেছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ঘণ্টা উড়েছে বিমানটি।

বিবিসি বলছে, উড্ডয়নের কিছু সময় পর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন বিমানের পাইলট।

লায়ন এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এডওয়ার্ড সিরাইত বলেছেন, এর আগের ফ্লাইটে বিমানটির ‘অজ্ঞাত কারিগরি ত্রুটি’ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্যা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে একই মডেলের ১১টি বিমান পরিচালনা করছে লায়ন এয়ার। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অন্যান্য ফ্লাইট বন্ধ রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়েছেন এডওয়ার্ড।

বিমান বিশ্লেষক গ্যারি সোয়েজ্যাতম্যান বলেন, সাধারণত খুব পুরনো বিমানগুলোর দুর্ঘটনার উচ্চঝুঁকি থাকে। তবে একেবারে নতুন বিমানেও একই ঝুঁকি থাকতে পারে।

LION-AIR

তিনি বলেন, বিমান যদি নতুন হয় তাহলে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে পারে, তবে সেগুলো চলাচল শুরুর পর ধরা পড়ে। এগুলো সাধারণত চলাচল শুরুর তিন মাসের মধ্যে দেখা যায়। মাত্র কয়েকদিন আগে তিনমাস পূর্ণ করেছে লায়ন এয়ারের বিধ্বস্ত বিমানটি।

অপর বিমান বিশ্লেষক জন অস্ট্রোয়ার বলেন, নতুন বিমানকে সাধরণত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য নিয়মিত ছুটিতে রাখা হয়। কারণ বিমানের সবকিছুই নতুন। বিমান প্রকাশনা দ্য এয়ার কারেন্টের সম্পাদক অস্ট্রোয়ার বলেন, নতুন বিমানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে... আর এটাই স্বাভাবিক। তবে ভিন্ন ভিন্ন কিছু সমস্যাও থাকতে পারে, যা বিমানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।

তবে লায়ন এয়ারের ফ্লাইট জেটি ৬১০ বিধ্বস্তের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে সেব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নেয়া একটু তাড়াতাড়ি হবে বলে একমত পোষণ করেছেন এ দুই বিশ্লেষক।

বিশ্লেষক গ্যারি সোয়েজ্যাতম্যান বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণেও বিমানটি বিধ্বস্ত হতে পারে। তবে এখনই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না। আমরা এ ব্যাপারে আরো তথ্য পেলে তবেই (বিমান বিধ্বস্তের কারণ নিয়ে) নিশ্চিত হতে পারবো।

অস্ট্রোয়ারের কণ্ঠেও শোনা গেল একই সুর। তিনি বলেন, আমি জানি না কী কারণে নতুন একটি বিমান বিধ্বস্ত হলো। এখানে বেশ কিছু ফ্যাক্টর আছে, যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজ দ্রুতগতিতে বিক্রি হতে থাকা বিমানের রেকর্ড গড়েছে। ইতোমধ্যে বিমানটির চার হাজার নতুন অর্ডার পেয়েছে।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।