যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত নয়

কৌশলী ইমা কৌশলী ইমা , যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জেন টমসন বলেছেন, ‘আমাদের দেশের বেশিরভাগ হাসপাতাল কভিড-১৯ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত নয়। করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুতির খামতি লক্ষ্য করা গেছে। এ ভাইরাসের প্রকোপের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ’।

দেশটির ন্যাশনাল নার্সেস ইউনাইটেডের পরিচালক বনি ক্যাস্টিল বলেছেন, নার্সদের করোনা নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীও খুব বেশি নেই।

এদিকে দেশটির কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীকে শনাক্ত করেছে ড্যানবুরি হাসপাতাল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজ্য গভর্নর নেড ল্যামন্ট। ড্যানবুরি হাসপাতাল প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা কেরি ইটনের ধারনা ড্যানবুরি অথবা নরওয়াক হাসপাতালে কোনো কর্মচারীর কাছ থেকে সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সে নিউ ইয়র্কের ওয়েসচেস্টার কাউন্টির বাসিন্দা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ যাবত ৪২ জন রোগীকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের কারও কাছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের নমুনা মেলেনি। তবে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আরও ২০০ জন রোগীর শরীর পরীক্ষা করা হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাসের প্রকোপের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। চীন থেকে শুরু হওয়া এর প্রাণঘাতী ভাইরাস ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়েছে। কিন্তু এসব দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরাই বলছেন, তাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের বড়বড় অর্থনীতির দেশগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শেয়ারবাজারগুলোর অবস্থা নাজুক। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছে। বিশ্বের ৮৫টি দেশের প্রায় এক লাখ মানুষ এখন করোনায় আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়, পর্যটন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা-সবকিছুতেই এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি শিক্ষার্থী এখন স্কুল ছেড়ে বাড়িতে সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে ডব্লিউএইচও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রস্ততি নিয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়েছে। গতকাল সংস্থাটি বলেছেন, অনেকে দেশেরই করোনা প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে। সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানম ঘেবরিয়াসাস জানান, এটা হেলাফেলার বিষয় না। এখন আড়মোগড়া ঝেঁড়ে সক্রিয় হওয়ার সময়। কোনো অজুহাত এ সময় দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

কানেকটিকাট ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, নিউ জার্সি ও নিউ হ্যাম্পশয়ার অঙ্গরাজ্যেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পেয়েছেন রাজ্য কর্তৃপক্ষ।

jagonews24

বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ২৩৭। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত ৫৭ হাজার ৬২২ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখন পর্যন্ত ৯৭টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৫১ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৭০ জন। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৬৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের।

চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৬৩৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯৭ জনের। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত চার হাজার ৭৪৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১২৪ জন।

জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। জার্মানিতে এই ভাইরাসে ৬৭০ জন আক্রান্ত হয়েছে। ফ্রান্সে ৬৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৯ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছে ৪২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

স্পেনে আক্রান্ত ৪শ এবং মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ২৭২, মৃত্যু ১৫। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ২১৪ এবং মারা গেছে ১ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ১৬৪ মৃত্যু ২। ইরাকে আক্রান্ত ৪৮, মৃত্যু ৪। ভারতে ৩১ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর প্রাণহানি ঘটেনি।

এছাড়া, সুইডেন আক্রান্ত ১৩৭, সিঙ্গাপুরে ১৩০, নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ১২৮ এবং মৃত্যু ১, নরওয়েতে আক্রান্ত ১২৭, বেলজিয়ামে ১০৯, হংকংয়ে ১০৮, মালয়েশিয়ায় ৮৩, অস্ট্রিয়ায় ৬৬, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ৬৩, মৃত্যু ২, বাহরাইনে ৬০, কুয়েতে ৫৮, কানাডায় ৫১, থাইল্যান্ডে ৪৮ এবং মৃত্যু ১, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৫ এবং মৃত্যু ১, গ্রিসে ৪৫, আমিরাতে ৪৫, আইসল্যান্ডে ৪৩, সান মারিনোতে ২৩ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ১, ডেনমার্কে আক্রান্ত ২৩, লেবাননে ২২, ইসরাইলে ২১, চেক রিপাবলিকে ১৯, আয়ারল্যান্ডে ১৮, আলজেরিয়াতে ১৭ এবং ভিয়েতনামে ১৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

অপরদিকে, ওমানে ১৬, ফিলিস্তিনে ১৬, মিসরে ১৫, ফিনল্যান্ডে ১৫, ব্রাজিলে ১৩, ইকুয়েডরে ১৩, পর্তুগালে ১৩, রাশিয়াতে ১৩, ক্রোয়েশিয়ায় ১১, কাতারে ১১, ম্যাকাউতে ১০, এস্তোনিয়ায় ১০, জর্জিয়ায় ৯, রোমানিয়ায় ৯, আর্জেন্টিনায় ৮, স্লোভেনিয়ায় ৮, আজারবাইজানে ৬, বেলারুশে ৬, মেক্সিকোতে ৬, পাকিস্তানে ৬, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ৫ এবং মৃত্যু ১, সৌদি আরবে ৫, চিলিতে ৫, পোল্যান্ডে ৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৪, নিউজিল্যান্ডে ৪, সেনেগালে ৪ ও হাঙ্গেরিতে ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এছাড়া লুক্সেমবার্গে ৩, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ৩, বসনিয়ায় ৩, ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রে ২, মরক্কোতে ২, আফগানিস্তান, আন্দোরা, আর্মেনিয়া, কম্বোডিয়া, জর্ডান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, গিব্রালটার, পেরু, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং টোগোতে একজন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

এমআরএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।