মহামারি মোকাবিলায় ফ্রান্সকে অবরুদ্ধ ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৩ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস মোকাবিলার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার থেকে গোটা ফ্রান্স অবরুদ্ধ এক পরিস্থিতির ভেতর চলে গেছে। যে ভাইরাস বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং আক্রান্ত করেছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষকে সেই ভাইরাস নিয়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়া সর্বশেষ দেশ হলো ফ্রান্স।

দেশটির বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ফ্রান্স মঙ্গলবার তার অবরুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও একধাপ এগিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আজ মঙ্গলবার ইইউ নেতারাও ইউরোপজুড়ে সীমান্ত এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ায় অবরুদ্ধ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। গোটা বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকার জনগণকে নিরাপদ রাখার জন্য এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন যা অনেক ক্ষেত্রে বিরল। সীমান্ত বন্ধ হচ্ছে ও মানুষ ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া নিরানন্দ এক ভাষণে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দেশের মানুষকে মঙ্গলবার থেকে ১৫ দিন ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সও এমন সব বিধিনিষেধ আরোপ করছে যাতে করে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানো যায়।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পর্যটকের দেশ ফ্রান্স। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশটির রাস্তাঘাট মানুষবিহীন হয়ে পড়েছে, দোকানপাট সব বন্ধ, রেস্তোরাঁ ও পর্যন্টন কেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশটির রাস্তায় সরকারি নির্দেশনা কার্যকরে ১ লাখ সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বাধ্যা হয়ে এই হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন যে, যারা সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবে না তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সেনাসদস্যদের নামানো হবে বলেও জানান তিনি। ফ্রান্সে ১৫ দিনের জন্য এসব বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি, এই যুদ্ধ হলো স্বাস্থ্য-যুদ্ধ। আমরা কোনো সেনাবাহিনী কিংবা কোনো দেশের বিরুদ্ধে লড়ছি না। অদৃশ্য এবং অধরা এক এবং শত্রুর সঙ্গে আমাদের এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা চলছেই।’ এর আগে ইতালি ও স্পেন অবরুদ্ধ ব্যবস্থা কার্যকর করেছে।

চীনের সবচেয়ে করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপর্যন্ত ইতালি ও স্পেন। গত ২৪ ঘন্টায় ইতালিতে আরও ৩৪৯ এবং স্পেনে ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ফ্রান্সে এখন আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজারের বেশি। এছাড়া দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাস শুধু মানুষকে সংক্রমিত করেনি, রোলারকোস্টার চালিয়েছে শেয়ারবাজারসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার ওয়াল স্ট্রিট সোমবার ১২ পয়েন্টেরও বেশি হারিয়েছে—১৯৮৭ সালের পর শেয়ারবাজারটির লেনদেনে সবচেয়ে বাজে অবস্থা ছিল গতকাল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার আস্থা জরুরিভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করে আস্থা ফেরানোর জোর চেষ্টা চালালেও বিনিয়োগকারীরে এখনো আতঙ্কিত অবস্থায়ই রয়েছেন। ডিসেম্বরের শেষে চীনে প্রাথমিকভাবে মহামারিটির বিস্তার শুরু হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন ইউরোপকে করোনা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বর্ণনা করছে।

চীনের চেয়ে এখন চীনের বাইরে বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হচ্ছেন এবং প্রাণ হারাচ্ছেন। চীনের বাইরে এখন প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর লাফিয়ে লফিয়ে বাড়ছে ইতালি এবং স্পেনে। ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছেই।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৭ হাজার ৪৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৬। অপরদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বিশ্বের ৮০ হাজার ৩৩৮ জন কোভিড-১৯ রোগী।

এসএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।