করোনাজয়ীদের রক্তে মুক্তির মন্ত্র?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২৬ এএম, ২৩ মার্চ ২০২০

নভেল করোনাভাইরাসের মতো করে যখন নতুন কোনো ভাইরাস পৃথিবীতে হানা দেয়, তখন সে বিষয়টি নিয়ে গবেষণার একটা বড় বিষয়বস্তু হয়- ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠাদের রক্ত। এ ধরনের ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর যারা সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বা কিভাবে যুদ্ধ করেছে। আর এমন গবেষণা এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে চিকিৎসার পথ খুলতে সহায়ক হয়।

এ বিষয়টা মাথায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টার করোনা ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কাছ থেকে রক্ত চেয়েছে।

সেরে ওঠা ব্যক্তিদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা বুঝতে পারবেন সংক্রমিত হওয়ার পর ওই ব্যক্তিদের শরীরে আদৌ কোনো প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল কি-না, আর যদি হয়ে থাকে তবে তা কিভাবে হয়েছিল। মানবশরীর কোনো ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সাধারণত নিজে থেকেই অ্যান্টিবডি তৈরি করে; যা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে। এ লড়াই থেকে মানবশরীর ভবিষ্যতেও ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিখে যায়। যার ফলে ওই একই ভাইরাসে একজন মানুষের দ্বিতীয়বার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টারের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ড্যারেল ত্রিউলজি বলছেন, এ গবেষণার প্রথম ধাপ হলো- এ ধরনের ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠাদের অ্যান্টিবডি রেসপন্স নিয়ে কাজ করা।

বিজ্ঞানীরা এখনও বোঝার চেষ্টা করছেন, নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর মানবশরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আসলে কতটা শক্ত লড়াই করতে পারে এবং একইব্যক্তির ভবিষ্যতে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পথ কতটা বন্ধ করতে পারে। করোনা ভাইরাস থেকে একবার সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের শরীর ভবিষ্যতে কতদিন ওই ভাইরাস থেকে বিপদমুক্ত থাকতে পারে সেটাও জানার ও বোঝার চেষ্টা চলছে। সার্স ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণায় দেখা গেছে- অসুস্থ হওয়ার পর তাদের শরীরে যে প্রতিরোধক কোষগুলো সক্রিয় হয়েছিল, ৬ বছর পর সেগুলোর আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না।

কভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে প্রাথমিক এক গবেষণায় (এটি এখনও কোথাও প্রকাশিত হয়নি) দেখা গেছে, সংক্রমিত হওয়ার পর এ রোগীদের শরীরের উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। এ থেকে ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একইব্যক্তি যে এই ভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবেন না, এটা তারই ইঙ্গিত। এখনও অপ্রকাশিত আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর বানরের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং একই বানর দ্বিতীয়বার করোনা ভাইরাসের সংক্রমিত হয়ে অসুস্থ হচ্ছে না।

ড্যারেল ত্রিউলজি বলছেন, তবে এই অ্যান্টিবডি চিকিৎসাবিদ্যায় কোনো কাজে লাগে কি-না তা বুঝতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্যও করোনাজয়ীদের রক্তের দিকে নজর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের রক্তের প্লাজমায় অ্যান্টিবডির মতো প্রতিরক্ষামূলক উপাদানগুলো যথেষ্ট পরিমাণে আছে এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের শরীরে যদি ওই ব্যক্তিদের রক্ত দেয়া যায় তবে তাদের শরীর করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন শক্তি পাবে। এটা আসলে বেশ পুরোনো পদ্ধতি। ১৯১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যখন স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিল তখনও এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, এতে করে গুরুতর অসুস্থদের মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা। সম্প্রতি, পরীক্ষামূলকভাবে মার্স, এইচ১এন১ এবং ইবোলা আক্রান্তদের এভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ড্যারেল ত্রিউলজি বলছেন, ইবোলার ক্ষেত্রে এটা ফলপ্রসু হয়েছে। এখন কভিড-১৯ নিয়েও আমাদের এগোতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কমিশনার স্টিফেন হান একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারাও বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন। এ পদ্ধতিতেও সম্ভবত চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।

তবে এ চিকিৎসাপদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ। আবার এভাবে প্লাজমার ব্যবহার থেকে পরবর্তীতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থেকে যায়। যতদিন না এরজন্য গ্রহণযোগ্য কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি পাওয়া যাচ্ছে কেবল ততদিনই এ বিষয়টা মাথায় রাখা যেতে পারে। তবে এ পদ্ধতির যে সুবিধা রয়েছে তা স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

যেহেতু করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রসঙ্গে এসেছে তাই একটা বিষয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে রেখেছেন ত্রিউলজি। তিনি বলছেন, করোনা ভাইরাসের আক্রান্তদের রক্তপরীক্ষা করে গবেষণা হতে পারে বলে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত বা আক্রান্তদের রক্ত বিপজ্জনক হবে না সাধারণত। তিনি বলছেন, সংক্রামক ভাইরাস মানুষের রক্তে বেশিদিন থাকে না। তাই ব্লাড ব্যাংক বা রক্তদানের ক্ষেত্রে এটা ভয়ের কারণ না। এ ভাইরাসের রক্তের মাধ্যমে সংক্রমণের কোনো তথ্য এখনও কোথাও পাওয়া যায়নি।

আর এ রকম কোনো মহামারীর সময় সুস্থ-সবলদের রক্ত দান অন্য সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রক্তের প্রচুর প্রয়োজন থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক জায়গায় রক্তদান কর্মসূচি থেমে গেছে। রক্তদানের যে পদ্ধতি, প্রত্যক্ষভাবে সেখান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সূত্র : দ্য ভার্জ

এনএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।