শরীরে করোনাপ্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আছে কি-না, জানা যাবে পরীক্ষায়
শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আছে কি-না, বা কোনো ব্যক্তি নিজের অজান্তেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি-না, তা জানা যাবে রক্ত পরীক্ষায়। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাইয়ের আইকান স্কুল অব মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা রক্তে অ্যান্টিবডি শনাক্তের এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তারা আশা করছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তারা এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে পারবেন।
গবেষকরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত দামে সস্তা, নির্ভরযোগ্য ও দ্রুতগতিতে কাজ করতে সক্ষম এই সেরোলজিক টেস্ট বিভিন্ন ধরনের কাজ করবে। অনেক সময় ব্যক্তি বুঝতে পারেন না তিনি করোনায় আক্রান্ত কি-না। তবে এই সেরোলজিক পরীক্ষায় কোনো ব্যক্তি জানুক বা না জানুক, তিনি আগে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি-না, বা তার শরীরে এর অ্যান্টিবডি আছে কি-না, তা জানা যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রক্ত পরীক্ষায় যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি ধরা পড়বে তাদের এই ভাইরাসে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। ফলে যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি ধরা পড়বে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন, কর্মে যোগ দিতে পারবেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। উহানের হুয়াঝং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এক গবেষণায় জানিয়েছে, সেখানকার করোনায় আক্রান্ত ৫৯ শতাংশ রোগী জানতেনই না যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করেছেন। পরে তাদের মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ এই ভাইরাসের উপসর্গ হলো-সর্দি, কাশি, হাঁচি, জ্বর বা গলাব্যথা ইত্যাদি।
করোনাভাইরাস নিয়ে আরেকটি জরিপ চালিয়েছেন জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির মহামারির গাণিতিক বিশেষজ্ঞ ড. জেরারডো চোয়েল। তিনি বলেছেন, সমুদ্রপথে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুস শিপের ১৮ শতাংশ যাত্রী জানতেন না তারা করোনায় সংক্রমিত। তাদের শরীরে এর সামান্য উপসর্গও প্রকাশ পায়নি।
তবে এই অ্যান্টিবডি কতদিন পর্যন্ত শরীরে টিকে থাকতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন গবেষকরা। তবে তারা বলছেন, কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা সম্ভব।
শুধু তাই নয়, তারা আরও বলেছেন, যারা এখনও করোনায় আক্রান্ত হননি কিন্তু এক মাস আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরেও এই অ্যান্টিবডি পাওয়া যেতে পারে।
আর যাদের শরীরে এই অ্যান্টিবডি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে, সম্ভবত এই ভাইরাস তাদের কিছুই করতে পারবে না।
লিপসম্যাগ ম্যাগাজিনকে গবেষক ড. ক্রামার বলেছেন, কোনো ব্যক্তির শরীরে একবার যদি এই অ্যান্টিবডি পর্যাপ্ত পরিমাণ তৈরি হয়, তাহলে তার পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম।
গবেষকরা বলছেন, কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনা-প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি পাওয়া গেলে তারা নিরাপদ। তাদের আক্রান্ত হওয়ার বা তাদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন তারা।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এক নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) সাবেক কমিশনার স্কট গটলিয়েব লিখেছেন, ‘যদি কোনো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশের কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা (অ্যান্টিবডি) থাকে, তাহলে কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর বাধানিষেধ শিথিল করতে অপেক্ষাকৃত বেশি নিশ্চিন্ত হতে পারে।’
তবে চাইলেই সবাই এই সেরোলজিক টেস্ট করাতে পারবেন না-অন্ততপক্ষে প্রথমে। গবেষকরা বলেছেন, ‘প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (যেমন-নার্স, দমকল বাহিনী, চিকিৎসক) এই টেস্ট করানো হবে।
তবে ড. ক্রামার ও তার টিম জানেন না প্রথমে কত ব্যাপকভাবে এই পরীক্ষা করানো হবে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহে তাদের ক্লিনিকে এই টেস্ট শুরু হবে।
সূত্র : ডেইলি মেইল
এসআর/জেআইএম