করোনায় আক্রান্তের পাশে নেই পরিবার, চিকিৎসকের হৃদয়বিদারক বর্ণনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৪১ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। এতে মৃ্ত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭০৪ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজার ৪৬৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যারা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। অনেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনে কান্নাকাটি করছেন। কেউ আবার মৃত্যুর সময় কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না।

আইসিইউতে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাংগন মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড বেলভ্যুর চিকিৎসক ড. কামিনী দ্যুবে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা খুব কঠিন সময় পার করছেন। তারা বেঁচে থাকার লড়াই করছেন প্রতি মুুহূর্তে। কিন্তু প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিবারের কারোর সঙ্গে তাদেরকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না।

ড. দ্যুবে বলেন, প্রায়ই এমন দেখতে পাচ্ছি যে, একজন করোনা আক্রান্ত রোগী মৃত্যুশয্যায়, তিনি মারা যাচ্ছেন কিন্তু তার পাশে কেউ নেই। যাদেরকে আইসিইউতে রাখা হচ্ছে, তাদের স্বজনদের ভোগান্তি দেখে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরা তাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফোনে কান্নাকাটি করছেন। তাদের চোখের পানি দেখা খুবই বেদনাদায়ক। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা মৃত্যুর সময় পরিবারের কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না। এটা খুবই মর্মান্তিক।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা যারা সর্বাত্মকভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, তারা দেখছেন, মরণাপন্ন রোগীরা কীভাবে হাসপাতালে আসছেন। আমার অভিজ্ঞতায় এর আগে এমন অবস্থা কখনও দেখিনি।

ড. দ্যুবে বলেন, আমি আমার জীবনে কখনও এমন শারীরিক ও মানসিকভাবে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়িনি। এত গভীর দুঃখ ও অশান্তিও অনুভব করিনি কখনও।

যখন প্রাথমিকভাবে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তখন তিনি তিনি ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এটি নিউমোনিয়া এবং কারও কারও জন্য অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতাসহ মৃত্যু ডেকে আনছে। বয়স্কদের জন্য করোনাভাইরাস আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

নিউ ইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চাপ থাকায় এ প্রভাব ড. দ্যুবের মতো চিকিৎসকদের ওপর পড়ছে। ড. দ্যুবের মতো অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চিন্তিত।
দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাদের নিজের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম হাসপাতালের কর্মীদের দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।

ড. কামিনী দ্যুবে বলেন, শহীদ হওয়ার জন্য আমরা চিকিৎসার পেশায় আসিনি। আমরা একটি গুরুতর সংকটে আছি এবং সুরক্ষা পাওয়া আমাদের প্রাপ্য। আমরা যুদ্ধের ময়দানে নেই। আমরা যুদ্ধের অঞ্চলে নেই।

সাধারণ মানুষ বিশেষজ্ঞদের কথা শুনলে এবং হোম কোয়ারেন্টানে থেকে করোনার বিস্তার কমিয়ে আনবে বলে ড. কামিনী দ্যুবের আশা।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকই নিউ ইয়র্কে। অঙ্গরাজ্যটি প্রায় ৪০ হাজার মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ধরা পড়েছে।

আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে চীন। করোনার উৎস দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৩৯৪। আর এতে মৃত্যু হয়েছে সংখ্যা ৩ হাজার ২৮৭ জনের।

করোনা মহামারিতে রীতিমতো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৭১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৩৪ জনে। দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৪৯৮।

এমএসএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।