নেই পিপিই, হেলমেট-রেইনকোটেই লড়ছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা
ভারতে পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে দেশটির কিছু চিকিৎসক রেইনকোট এবং মোটরবাইকের হেলেমেট পরেই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। ভারতে করোনার সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই চিকিৎসকদের এই সুরক্ষা সামগ্রীর ঘাটতি দেশটির দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছে।
এদিকে, সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ঘাটতি পূরণের জন্য ভারত স্থানীয়ভাবে এবং চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
ভারতে মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন অন্তত এক হাজার ২৫১ এবং মারা গেছেন ৩২ জন। করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন এমন এক ডজনেরও বেশি চিকিৎসক রয়টার্সকে বলেছেন, পর্যাপ্ত মুখোশ এবং পিপিই ছাড়া চিকিৎসা দেয়ায় তারা উদ্বিগ্ন। এমনকি এই ভাইরাসের বাহকও হতে পারেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী মে মাসের মাঝের দিকে দেশটিতে এক লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এর ফলে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং চিকিৎসকদের ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গত সপ্তাহে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বেলঘাটা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা প্ল্যাস্টিকের রেইনকোট পরে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এই হাসপাতালের দু'জন চিকিৎসক রয়টার্সকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এবং রয়টার্স চিকিৎসকদের রেইনকোট পরার ছবি দেখতে পেয়েছে।
বেলঘাটা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, আমরা আমাদের জীবনের বিনিময়ে কাজ করবো না। কর্তৃপক্ষ প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে এমন আশঙ্কায় নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্তাবধায়ক ডা. আশীষ মান্না মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, রাজধানী নয়াদিল্লির উত্তরাঞ্চলের হরিয়ানা প্রদেশের ইএসআই হাসপাতালের চিকিৎসক সন্দ্বীপ গর্গ বলেন, এন৯৫ মাস্ক না থাকায় তিনি মোটরবাইকের হেলমেট পরে রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি একটি হেলমেট পরেছিলাম। এর সামনে একটি মুখাবরণ রয়েছে; যা আমার মুখ ঢেকে রাখে। এর পাশাপাশি তিনি সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করেন।
রয়টার্স এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়াদিল্লির ফেডারেল সরকারের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা এখন শুধুমাত্র প্রার্থনা করে বেঁচে আছি। এটা এমন নয় যে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে আমরা বাঁচতে পারবো।
হরিয়ানার রোহতকের একটি সরকারি হাসপাতালে বেশ কয়েকজ জুনিয়র চিকিৎসক করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যথাযথ সুরক্ষা সামগ্রী না পাওয়া পর্যন্ত তারা রোগীদের সেবা দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
রোহতকের একজন চিকিৎসক বলেন, তারা সবাই মিলে কোভিড-১৯ নামে একটি বেসরকারি তহবিল গঠন করেছেন। এই তহবিলে প্রত্যেক চিকিৎসক মাস্ক এবং অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য এক হাজার রুপি করে সহায়তা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকেই ভীত। সুরক্ষা ছাড়া কেউই কাজ করতে চান না।
এসআইএস/এমকেএইচ