ভারতে ‘খাদ্য দাঙ্গা’ বেধে যাওয়ার শঙ্কা
করোনাভাইরাসের কারণে ২১ দিনের লকডাউন চলছে ভারতে। তাতেও কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না করোনা পরিস্থিতি। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত এবেং মৃতের সংখ্যা।
ভারতে এমনিতেই বিশাল জনগোষ্ঠী বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে। সেখানে করোনাভাইরাসের ফলে লকডাউনের কারণে এই জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি পড়ে গেছে চরম অনিশ্চয়তায়। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা সত্ত্বেও এত বড় জনগোষ্ঠীর ভরণ-পোষণের কানাকড়িও পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় ভারতজুড়ে খাদ্য দাঙ্গা বেধে যেতে পারে বলে মোদি সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন সাবেক প্রধান পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন।
ভারতের দ্য ওয়ারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রণব সেন এই শঙ্কার কথা জানান। দ্য ইকোনমিক টাইমস সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। কাজের সন্ধানে ভারতের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ অবস্থান করে শহরাঞ্চলে। এদের মধ্যে অধিকাংশই দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ। করোনার কারণে পুরোপুরি ঘরে বন্দী হয়ে পড়েছে এই মানুষগুলো।
অল্প কয়েকদিন ঘরে ধরে রাখা গেলেও এখন খেটে খাওয়া মানুষকে ভারত সরকার কিংবা প্রশাসন কোনোভাবেই ঘরে রাখতে পারছে না। মানুষ খাদ্য চায়। সে জন্য প্রয়োজন কাজ। কাজের সন্ধানে মানুষ ছুটছে শহরের দিকে। সম্প্রতি ভারতীয় মিডিয়ায় এমন খবর এবং ছবিই প্রকাশ হয়।
প্রণব সেন মোদি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এভাবে যদি উপার্জন হারানো পরিযায়ী শ্রমিক ও কর্মীরা খাবার না পায় তাহলে অবিলম্বে খাদ্য দাঙ্গা বেধে যেতে পারে। ঠিক যেমনটা অতীতে দুর্ভিক্ষের সময় হয়েছিল।’
নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রণব সেন বলেন, ‘যদি গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণ করা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
ভারতজুড়ে ঘোষিত ২১ দিনের লকডাউনে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন উত্তরপ্রদেশ, বিহারসহ অন্যসব রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা। মূলতঃ দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো বড় বড় বাণিজ্যিক শহরে নির্মাণকাজ করার জন্য আসেন এই শ্রমিকরা।
লকডাউনের কবলে পড়ে তারা হারিয়েছে রুটিরুজি। বাধ্য হয়েই ঘরে ফিরতে হচ্ছে তাদের। কোনো যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল না করায় দু’দিন-তিনদিন ধরে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে এসব শ্রমিককে। দোকান-বাজার বন্ধ থাকায় কার্যত অনাহারেই হেঁটে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
প্রণব সেন বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে যদি পরিযায়ী শ্রমিকরা সহজে খাবার না পায়। সে ক্ষেত্রে খাদ্য দাঙ্গা বেধে যেতে পারে। দেশে আমাদের এই ধরনের অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন যদি সহজে খাবার পৌঁছে দিতে না পারি, তাহলে আবার খাদ্য দাঙ্গা বেধে যেতে পারে। খাবারের জোগান ব্যবস্থা যদি স্বাভাবিক না হয়, রুটিরুজি চলে গেছে এমন শ্রমিকদের খাদ্যের চাহিদা যদি পূরণ না হয় সেক্ষেত্রে খাদ্য দাঙ্গা বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’
অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, যেভাবে একসঙ্গে প্রচুরসংখ্যক মানুষ খাবারের জন্য আসছেন ঠিক যেমন কারফিউয়ের সময় হয়। তেমনই ২-৩ ঘণ্টার জন্য দোকান খোলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে বহু মানুষের রান্না করতে গিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে।
গত শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছিলেন, তারা প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ মানুষকে দুপুরের এবং রাতের খাবার পরিবেশন করবেন। এর মধ্যে ২২৪টি নাইট শেল্টার এবং ৩২৫টি স্কুলও রয়েছে।
তিনি বলেন, লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে মূলত করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। প্রণব সেন বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে যেখানে খাবারের সন্ধান পাবে, সেখানে প্রচুর মানুষ একসঙ্গে জড়ো হয়ে যাবে। কিন্তু এত মানুষের জন্য একসঙ্গে রান্না করাও হবে অসম্ভব এবং খাবার পরিবেশন করাও হবে অসম্ভব। তখন পরিস্থিতি কি দাঁড়াতে পারে?’
শুধু তাই নয়, ভারতের সাবেক প্রধান এই পরিসংখ্যানবিদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, খাবারের আশায় রাস্তায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে পারে সাধারণ মানুষ। তখন তাদের যদি সঠিকভাবে খাবার দেয়া না যায়, তখন নিশ্চিতভাবেই ‘দাঙ্গা’য় রূপ নিতে পারে। যা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো ভারতে।
আইএইচএস/