ইউরোপে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম সাইপ্রাস ও মাল্টায়
মো. মাহাফুজুল হক, সাইপ্রাস থেকে
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম মাল্টা এবং সাইপ্রাসে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সঠিক সময়ে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই দেশগুলো মৃত্যুর হার কমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
সাইপ্রাসে কোভিড-১৯ থেকে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৫৯৫ জন। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে ৫৮ জন। আক্রান্তের তুলনায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে সাইপ্রাস সবচেয়ে বেশি সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরাতে সফল হয়েছে। অন্যদিকে মাল্টায় মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫০ জন এবং সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে হয়েছে ১৬ জন।
দেশ দুটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে চীন জানালো, দেশটির হুবেই প্রদেশের উহানের একটি পাইকারি সি ফুড মার্কেট এলাকায় একধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। একে কর্তৃপক্ষ এক ধরনের করোনাভাইরাস হিসেবে শনাক্ত করলো। দেশটিতে হু হু করে বাড়তে থাকলো আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল মৃত্যুও। দ্রুত কর্তৃপক্ষ রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য উহান লকডাউন করলো। এরপর ধীরে ধীরে লকডাউন করা হলো দেশটির বহু শহর।
ধীরে ধীরে কোভিড-১৯ চীনে তাণ্ডব চালিয়ে হলো ইউরোপমুখী। তখন মহামারির কেন্দ্রে পরিণত হলো ইউরোপ। ইতালিকে বানালো মৃত্যুপুরী। এরপর ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়ামসহ মহাদেশটির প্রায় সব দেশেই প্রাণহানি বেড়েই চলছে। এশিয়ার দেশ ইরানও বেশ বেকায়দায় রোগটি নিয়ে।
ইউরোপ যখন এই রোগ সামলাতে নাস্তানাবুদ চীন তখন অনেকটা সামলে নিয়েছে। সেখানে শুরুর দিকে যেভাবে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছিল তাতে বেশ শক্ত হাতে লাগাম টেনে ধরেছে দেশটি। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহসহ অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতাও করা শুরু করেছে।
এ রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার না হলেও রোগটি নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা বারবার জানিয়ে আসছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপে প্রতিদিন যখন হাজার হাজার প্রাণ কাড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রে তখনও ততটা ভংয়কর হয়ে ওঠেনি কোভিড-১৯। কিন্তু আজ কোভিড-১৯ এর দংশনে নীল যুক্তরাষ্ট্র। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ডওমিটার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি চীন জানালো করোনাভাইরাসে দেশটিতে প্রাণ গেছে ৮ জনের। এরপর পার হতে চলেছে ৮১ দিন। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ প্রাণ কেড়েছে ১ লাখ ৪৩৭ জনের। শুরুর দিকে চীনে মৃত্যুর হার ছিল বেশি। কিন্তু তাকে খুব কম সময়ের মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইরান। সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে ইতালিতে।
দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪৯, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ হাজার ৯১১, স্পেনে ১৫ হাজার ৯৭০, ফ্রান্সে ১২ হাজার ২১০, যুক্তরাজ্যে ৮ হাজার ৯৩১, ইরানে ৪ হাজার ২৩২, চীনে ৩ হাজার ৩৩৬, বেলজিয়ামে ৩ হাজার ১৯, জার্মানিতে ২ হাজার ৬০৭, নেদারল্যান্ডসে ২ হাজার ৫১১ জনের প্রাণ গেছে। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ১৮৫ দেশ ও অঞ্চলে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী।
এ রোগে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৭ লাখের কাছাকাছি। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজারের মতো। স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সে লাখ পেরিয়েছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চীনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে কমে এলেও দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার মানুষ।
এমআরএম/এমকেএইচ