করোনা নিয়ন্ত্রণে যেভাবে সফল ‘কেরালা মডেল’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২০

ভারতে গত ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো একজন করোনা রোগী শনাক্ত হন। এই রোগী পাওয়া যায় দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা প্রদেশের কান্নুর জেলায়। তিনি আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে। পরে ওই ব্যক্তিকে ২৮ দিনের জন্য স্বেচ্ছা আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও ওই ব্যক্তির শরীরে করোনার কোনো লক্ষণই তখন প্রকাশ পায়নি।

২৬ দিন পর ১৪ এপ্রিল ওই ব্যক্তিকে আবারও পরীক্ষা করা হয়; তখনও করোনার উপসর্গবিহীন ছিলেন এই ব্যক্তি। করোনার উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা থেকে ফিরে আসার কারণে প্রশাসন পূর্ব সতর্কতা হিসাবে এসব পদক্ষেপ নেয়। দু'দিন পর জানা যায়, ওই ব্যক্তি করোনা পজিটিভ।

২০ মার্চ দুবাই থেকে আরও দুজন কান্নুরে আসেন; তাদেরকেও আইসোলেশনে রাখা হয়। তাদেরও কোনো উপসর্গ ছিল না। পরে ১৪ এপ্রিল তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার একদিন পর ১৬ এপ্রিল এ দুই ব্যক্তিও করোনা পজিটিভ হিসাবে শনাক্ত হন।

কান্নুর জেলা মেডিক্যাল কর্মকর্তা কে নারায়ন নায়েক বলেন, বিদেশফেরত ২৪৮ জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়; তাদের মধ্যে ১৭ জনের ফল পজিটিভ পাওয়া যায়। এই ১৭ জনের মধ্যে ৯৫ শতাংশের করোনার কোনো উপসর্গই ছিল না।

তিনি বলেন, আমরা ২৮ দিনের কঠোর আইসোলেশন অনুসরণ করেছি এবং উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও উচ্চ ঝুঁকি বিবেচিত লোকজনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, কারণ এসব লোকের জন্য বাধ্যতামূলক কঠোর আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এছাড়া আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা হতো।

মানুষকে ঘরে রাখতে রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নিত্য-প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধপত্র সরবরাহ করা হয়। ড্রোনে ক্যামেরা দিয়ে পুরো রাজ্যের অলিগলিতে মানুষের চলাচলের ওপর নজরদারি করা হয়।

ভারতজুড়ে করোনা পরীক্ষার যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে কেরালার গল্প সেটি থেকে একটু ভিন্ন ধাঁচের। ভারতে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকাকালীন করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই কেবলমাত্র পরীক্ষা করা হয়। কিন্ত কেরালা বিদেশফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা সকলকে শনাক্ত ও আইসোলেট করে এবং করোনা পরীক্ষা করায়।

ডা. মোহাম্মদ আশীল ভারতের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে করোনা মোকাবিলায় গঠিত টিমের একজন সদস্য। তিনি এনডিটিভিকে বলেন, উহানে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল যে ২৭ দিন পর একজনের শরীরে করোনার লক্ষণগুলো দেখা দেয়। কমপক্ষে পাঁচ শতাংশের ক্ষেত্রে ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিনের বেশি ছিল। কেরালায় ২৮ দিনের আইসোলেশনের পেছনে এটিই ছিল শক্তিশালী যুক্তি।

ডা. আশীল বলেন, কেরালায় ২৬ দিন পরও করোনার উপসর্গ দেখা গেছে। এছাড়া প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের লক্ষণ ছিল একেবারে মৃদু। এখানে এমন অনেক ঘটনা আছে, যাদের ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিনের বেশি।

তবে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, ৯৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে করোনার লক্ষণ দেখা দেয় শূন্য থেকে ১৪ দিনের মধ্যে (অথবা পাঁচদিনের মধ্যে)। বাকি পাঁচ শতাংশের ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পেতে ২৪ দিন থেকে এক মাসের বেশি সময়ও লাগছে। এই পাঁচ শতাংশ লম্বা সময় ধরে তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়; যে কারণে প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

মার্চে ভারতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় কেরালায়; এখন পর্যন্ত সেখানে মোট ৩৯৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। জোরাল পদক্ষেপের কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল হয় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই রাজ্য। করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সফল কেরালা মডেল এখন বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্বের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা করোনা মোকাবিলায় দেশে দেশে কেরালা মডেল অনুসরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো- কেরালায় করোনায় মারা গেছেন মাত্র ৩ জন। কিন্তু দেশটির মহারাষ্ট্রে ১৯৪, মধ্যপ্রদেশে ৫৩ এবং দিল্লি ও গুজরাটে ৩০ জনের বেশি করে মানুষ করোনায় মারা গেছেন।

আরও মজার তথ্য হলো- কেরালায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২৪৫ জন ইতোমধ্যে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। ভারতে শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১‌৩ হাজারের বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন ৪৩৭ জন।

এসআইএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।