ভারতে লকডাউন শিথিলে যেসব পরিবর্তন ঘটলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২০

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা জারির পর ভারতের বেশ কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। আজ থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে গত ১৪ এপ্রিল দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউনের মেয়াদ আগামী ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে শর্তসাপেক্ষে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ঘোষণা দেন।

মূলত যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ এখনো ধরা পড়েনি কিংবা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা কম সেসব এলাকা থেকে লকডাউন কিছুটা শিথিলের কথা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তবে লকডাউন প্রত্যাহার করবে কিনা তা নির্ভর করছে দেশটির রাজ্য সরকারগুলোর ওপর।

তেব কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ সোমবার থেকে লকডাউন শিথিল হওয়া জেলাগুলোয় কৃষি ও শিল্পশ্রমিকেরা এক অঞ্চল থেকে অন্যত্র যাতায়াত করতে পারবেন। সে জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিবহনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু কোনোভাবেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন না। 

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক, এটিএম, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসী এবং সরকারী অফিস খোলা থাকবে। এছাড়া স্ব-কর্মসংস্থান- যেমন প্লাস্টিক শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রিরা তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাবে।

যেসব রাজ্য লকডাউন শিথিল করেছে

মহারাষ্ট্র: যেসব রাজ্য লকডাউন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছে তার মধ্যে একটি হলো ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত মহারাষ্ট্র। ভারতে সবচেয়ে বেশি করোনার সংক্রমণ হয়েছে দেশটির পশ্চিমে অবস্থিত এই রাজ্যে। তবে রাজ্যটির সরকার সোমবার সকাল থেকে ‌‘গ্রিন’ ও ‘অরেঞ্জ’ জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় জরুরি কার্যক্রম চালু করেছে।

রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২০৩ জন। এরমধ্যে ২২৩ জন মারা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আজ ২১ এপ্রিল থেকে রাজ্যটি কৃষিখাত, যেমন, খামার, ফিশারিজ ও ফসল রোপণের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তবে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোর ক্ষেতে এটা প্রযোজ্য নয়।

কেরালা: করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য বিশ্বব্যাপী ‘কেরালা মডেল’ এখন প্রশংসা কুড়াচ্ছে। তবে এখন রাজ্যটির সরকার লকডাউন শিথিল করার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এখন সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। রাজ্য সরকার ‘গ্রিন জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা দিয়ে রেস্তোরাঁ ও হোটেল পুনরায় চালু হয়েছে কেরালায়। এছাড়া জোড়-বিজোড় অনুযায়ী ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একদিন জোড় নম্বর প্লেটের গাড়িগুলো রাস্তায় চলাচল করলে পরদিন করবে বিজোড় গাড়িগুলো। এভাবে পর্যায়ক্রমে তা চলতে থাকবে।

মধ্যপ্রদেশ: যেসব জেলায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে এখনো কেউ শনাক্ত হয়নি, সেসব জেলায় কৃষিকাজ ও উৎপদান কার্যক্রমণ পুনরায় চালু হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। তবে ইন্দোর, ভোপাল কিংবা উজ্জামের মতো জেলাগুলোতে করোনা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হওয়ায় সেসব জেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জরুরি কাজের মতো বিষয়গুলো পুনরায় শুরু করার অনুমতি দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকার। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যটি করোনা মোকাবিলায় বেশ সফল বলে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়া ওই রাজ্যে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকা তুলনামূলক অনেক কম।

উত্তরপ্রদেশ: ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গতকাল রোববার করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে লকডাউন শিথিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজ্যটির ১৯টি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জনের বেশি। এসব এলাকায় লকডাউন শিথিল না করার নির্দেশ দেন তিনি।

যেসব রাজ্য লকডাউন শিথিল করেনি

দিল্লি: ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল হলো দিল্লি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ায় রোববার রাজ্যজুড়ে লকডাউন জারি রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ পর করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে।

অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘দিল্লিতে ১১টি জেলা রয়েছে এবং এর সবকটি এখন হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা সংক্রমিত এসব এলাকায় লকডাউন শিথিল কেরা যাচ্ছে না। গতকাল নতুন করে যে ১৮৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে তাদের কারোরই করোনার উপসর্গ ছিল। তারা জানতোও না তারা আক্রান্ত।’

দিল্লিতে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৪৫ জন মারা গেছেন।

পাঞ্জাব: উত্তর ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের সরকারও লকডাউন শিথিল করছে না। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, দেশজুড়ে জারি আগামী ৩ মে পর্যন্ত তাদের রাজ্যে লকাডাউন অব্যাহত থাকবে। এর আগে তা শিথিল করার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের।

তেলেঙ্গানা: দেশটির দক্ষিণঞ্চলীয় প্রদেশ তো আরও একধাপ এগিয়ে। তারা ইতোমধ্যে আগামী ৭ মে পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে লকডাউন রাখার ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিতম লকডাউন আগামী ৩ মে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কর্ণাটক: লকডাউন শিথিল না করার তালিকায় দক্ষিণ ভারতের আরেক রাজ্য কর্ণাটকও।

সূত্র: সিএনএন

এসএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।