ইউরোপে করোনা পৌঁছায় ডিসেম্বরে
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কাছে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এক ব্যক্তির নিউমোনিয়া শনাক্ত হয়। তার চিকিৎসক এখন বলছেন, সে নিউমোনিয়া ছিল আসলে করোনাভাইরাস। এর অর্থ হচ্ছে, আগে যা ধারণা করা হচ্ছিল তার প্রায় একমাস আগেই করোনাভাইরাস ইউরোপে এসেছে।
ড. ইভস কোয়েন ফরাসি গণমাধ্যমকে বলেন, ওই রোগীর নাক এবং গলা থেকে যে লালা সংগ্রহ করা হয়েছিল; সেটি সম্প্রতি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেছে।
ওই ব্যক্তি এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, তার দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কিভাবে হয়েছে সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না। কারণ তিনি কোন সংক্রমিত এলাকায় যাননি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার কিভাবে হয়েছে সেটি বুঝতে হলে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। ড. কোয়েন প্যারিসের কাছে এভিসেন এন্ড জ্যঁ ভার্দিয়ে হাসপাতালের এমারজেন্সি মেডিসিনের প্রধান। অন্যদিকে আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স ৪৪ বছর। তিনি প্যারিসের উত্তর-পূর্বে বসবাস করেন।
তার মাঝে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ ছিল। কারণ তিনি শুষ্ক কাশি, জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
২৭ ডিসেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর চারদিন পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীন অফিসকে জানানো হয় যে উহানে অজ্ঞাত কিছু নিউমোনিয়ার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ওই রোগী ফ্রান্সের একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংক্রমিত হওয়ার আগে তিনি অন্য কোথাও ভ্রমণ করেননি।
ড. কোয়েন বলেন, ওই ব্যক্তির দুই শিশু সন্তানও অসুস্থ হয়েছিল। তবে তার স্ত্রীর মধ্যে কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রী শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরের কাছে একটি সুপার মার্কেটে কাজ করতেন। সেখানে কাজ করা অবস্থায় তিনি হয়তো চীন থেকে আসা কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন।
আক্রান্ত ব্যক্তির স্ত্রী জানান, প্রায় সময় বিমানবন্দর থেকে অনেকে তাদের মালামাল নিয়ে সুপার মার্কেটে আসতো। ড. কোয়েন বলেন, আমরা ভাবছি ওই নারী হয়তো লক্ষণ-উপসর্গবিহীন ছিলেন।
এ বিষয়টি ভালো মতো তদন্ত করে দেখা উচিত বলে ড. কোয়েন বলেন।
নতুন ঘটনাটি কীভাবে পাওয়া গেছে?
ড. কোয়েন ফ্রান্সের একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন, গত ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে যেসব ব্যক্তি ফ্লু'র উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের নথিপত্র তিনি আবারো পর্যালোচনা করে দেখছিলেন।
তিনি সর্বমোট ১৮ জনের নাক এবং গলার লালা পরীক্ষা করেছিলেন। সম্প্রতি সেসব নমুনা আবারো পরীক্ষা করে দেখেছেন ড. কোয়েন। তিনি বলেন, ১৪ জনের মধ্যে একজনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। এসব নমুনা আমরা দুইবার পরীক্ষা করে দেখেছি যাতে ভুল না হয় এবং দু'বারই পজিটিভ আসে।
ড. কোয়েন বলেন, তিনি এ বিষয়টি ফ্রান্সের ন্যাশনাল হেলথ অ্যাজেন্সিকে জানিয়েছেন। এছাড়াও এসব নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করার জন্য অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের আহবান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এ সপ্তাহের শেষের দিকে আসবে এবং সেটি আন্তর্জাতিক একটি জার্নালে প্রকাশিত হবে।
এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্সে প্রথম তিনটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হয় ২৪ জানুয়ারি। এদের মধ্যে দু'জন ছিলেন উহান ফেরত এবং আরেকজন তাদের পরিবারের সদস্য।
নতুন করে যে রোগীর কথা বলা হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি অনেকে আগেই হয়েছে। করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়িয়েছে সেটি বোঝার জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে পুরো ধারণা হয়তো বদলে যাবে।
এখনো পর্যন্ত যেটা জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস ইউরোপে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রথম ঘটে এক জার্মান নাগরিকের মাধ্যমে। তার একজন চীনা সহকর্মীর মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়েছে বলে জানা যায়। সে ব্যক্তি ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারির মধ্যে জার্মানি ভ্রমণ করেছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে আমেরিকাও তাদের তথ্য হালনাগাদ করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় সম্প্রতি একটি পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে দেখা গেছে, যা ধারণা করা হয়েছিল তার একমাস আগে দেশটিতে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি বাংলা।
এসআইএস/এমএস