বিশ্বে বাড়লেও ছোট্ট দুটি দেশে মৃত্যুর হার ০.১ শতাংশেরও নিচে
বিশ্বে করোনাভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেলেও ক্ষুদে দুটি দেশ এই প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ধরে রেখেছে। বিশ্বের উন্নত এবং শক্তিশালী চিকিৎসাব্যবস্থার দেশগুলো যখন রীতিমতো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে, তখন সিঙ্গাপুর এবং কাতার কীভাবে এর লাগান টানতে সক্ষম হলো সেটি তুলে ধরেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
সিঙ্গাপুর এবং কাতারে করোনায় প্রাণহানির হার মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ। এশিয়ায় করোনা আক্রান্তের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি সিঙ্গাপুর। যেখানে প্রবাসী শ্রমিকদের ডরমিটরিগুলো হয়ে উঠেছে করোনা বিস্তারের কেন্দ্র। তবে কয়েকদিন আগে দেশটিতে ১০২ বছর বয়সী এক নারী করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মহামারিতে সুস্থ হওয়ার হার ঊর্ধ্বমূখী রাখার জন্য রোগীর বয়স এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সক্ষমতা প্রধান ভূমিকা পালন করছে। কিছু কিছু দেশ যেমন ভিয়েতনাম স্বল্পমাত্রার প্রাদুর্ভাব দেখেছে, কিন্তু দেশটিতে একজনও করোনায় মারা যায়নি। করোনার ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম ভিয়েতনামে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের কিছু বেশি।
বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে কাতারে করোনায় মৃত্যুর হার মাত্র ০ দশমিক ০৭ শতাংশ। দেশটিতে ১৭ হাজার ৯৭২ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন মাত্র ১২ জন। সিঙ্গাপুরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই দেশটিতেও মৃত্যুর হার ০ দশমিক ০৯৩ শতাংশ। উভয় দেশই মোট জনসংখ্যার প্রতি লাখে মৃত্যুর হার ০ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম সৃমৃদ্ধশালী দেশগুলোর তালিকায় আছে এ দুই দেশ; যার অর্থ হচ্ছে প্রয়োজনে হাসপাতাল এবং টেস্ট কিটের অতিরিক্ত ব্যয় বহনের সক্ষমতাও রয়েছে। কাতার এবং সিঙ্গাপুরের পর করোনায় কম মৃত্যু বেলারুশ, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
করোনায় মৃত্যুর এই হার দেশগুলোর সরকারি হিসাবের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। তবে বেলারুশ সরকারের করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণের তথ্য নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্লোবাল বায়োসিকিউরিটির অধ্যাপক রাইনা ম্যাকইনটায়ার বলেন, মৃত্যুর সর্বনিম্ন হার মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে: পরীক্ষা, রোগীর বয়স এবং আইসিইউ সক্ষমতা।
তিনি বলেন, যেসব দেশ বেশি পরিমাণে পরীক্ষা করেছে এবং মৃদু উপসর্গের রোগী শনাক্ত করেছে; সেসব দেশে মৃত্যুর হার কম। অন্যদিকে, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, আইসিইউ সঙ্কট এবং ভেন্টিলেটর সক্ষমতাও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ।
কাতারের চেয়ে সিঙ্গাপুরে বয়স্ক এবং মাঝবয়সী জনগোষ্ঠী বেশি হলেও দেশটিতে করোনায় সংক্রমিতদের বেশিরভাগই নিম্ন-আয়ের প্রবাসী শ্রমিক। সিঙ্গাপুরে এই প্রবাসীদের মধ্যে যারা তরুণ তাদেরকে কাজে যাওয়ার আগে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়।
একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশই প্রবাসী; যারা মূলত তরুণ। আমিরাত এবং কাতারেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী তরুণ প্রবাসী; এ দুই দেশেও কাজে যোগ দেয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। করোনার এই সময়ে একবার কাজ শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারেন না তারা।
এসআইএস/এমএস