করোনার ওষুধের দাম নির্ধারণে সেবা নাকি ব্যবসায় গুরুত্ব গিলিয়াডের?
করোনাভাইরাস মহামারিতে সারা বিশ্ব হাঁসফাঁস করছে কবে আসবে এর ওষুধ বা প্রতিষেধক। শুধু মানুষের প্রাণরক্ষাই নয়, যারাই এ ওষুধ বাজারে আগে আনতে পারবে, বিশ্বব্যাপী তাদের খ্যাতির পাশাপাশি আর্থিক লাভও যে আকাশ ছোঁবে, তা বলাই বাহুল্য। এ কারণে করোনার সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি ওষুধ নিয়ে গবেষণায় উঠেপড়ে লেগেছে একাধিক দেশ। তবে এখন পর্যন্ত ইবোলার চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমডেসিভিরেই সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
করোনার চিকিৎসায় রেমডেসিভিরের পেছনে কেমন খরচ হবে তা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা। ওষুধটির প্রস্তুতকারক গিলিয়াড সায়েন্সেস কি মহামারির সুযোগ নিয়ে আর্থিক লাভেই মন দেবে, নাকি জনগণের সেবার কথা চিন্তা করে অল্প খরচেই এটি বাজারজাত করবে- তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে নানা আলোচনা।
মাত্র এক দশকেরও কম সময় আগে হেপাটাইটিস সি’র চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের একেকটি পিলের দাম এক হাজার ডলার রেখে বেশ কুখ্যাতি অর্জন করেছিল মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সালের দিকে সোভালডির অমন আকাশচুম্বী দামের কারণে জনরোষে পড়ে গিলিয়াড। এবার করোনা মহামারির মধ্যে আবারও সেই একই বিষয় উঠে এসেছে- ওষুধের দাম কত হবে?
ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছর অন্তত ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমডেসিভির বিক্রি হতে পারে বিশ্বজুড়ে। আর মহামারি চললে ২০২২ সালে তা দাঁড়াবে অন্তত ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে। তবে গিলিয়াড বা অন্যান্য ওষুধ প্রস্তুককারকদের এ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করেন ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের পরামর্শক ও সাবেক নীতি-নির্ধারকরা।
গিলিয়াড সায়েন্সেসের প্রধান নির্বাহী ড্যানিয়েল ও’ডে জানিয়েছেন, তারা অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রেমডেসিভির দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে গিলিয়াড প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার যার এ ওষুধ দরকার তাদের সেটি অবশ্যই দেয়া হবে।
এছাড়া, চলতি বছরেই বিশ্বজুড়ে অন্তত ১০ লাখ রোগীর জন্য করোনার ওষুধ সরবহারাহের লক্ষ্য রয়েছে গিলিয়াডের, দরকার হলে ২০২১ সালে তা আরও বাড়ানো হবে। তবে এর দামের বিষয়টি এখনও খোলাসা করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
গত মঙ্গলবার গিলিয়াড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা অন্তত ২০২২ সাল পর্যন্ত রেমডেসিভির উৎপাদনের জন্য ইউরোপ, এশিয়া ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওষুধ নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়া, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বল্পমূল্যে সরবরাহের জন্য ভারত-পাকিস্তানের ওষুধ নির্মাতাদের ভলান্টারি লাইসেন্স দেয়ারও চিন্তা চলছে।
হস্তক্ষেপ করবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার?
ইনস্টিটিউট ফর ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক রিভিউ (আইসিইআর) জানিয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যের হিসাবে করোনার চিকিৎসায় প্রতি ১০ দিনে ৪ হাজার ৫০০ ডলার খরচ হতে পারে।
তবে ভোক্তা অধিকার সংস্থা পাবলিক সিটিজেন বলছে, রেমডেসিভিরের একেক দিনের কোর্সের দাম হওয়া উচিত সর্বোচ্চ এক ডলার। এতেই উৎপাদন খরচ উঠিয়ে সন্তোষজনক লাভের মুখ দেখবে গিলিয়াড।
মহামারির কারণে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি৫০০-এর সূচক ১২ শতাংশ পড়ে গেছে, সেখানে করোনার সম্ভাব্য ওষুধ নির্মাতা হিসেবে পরিচিতির কারণে ইতোমধ্যেই শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে গিলিয়াড সায়েন্সেসের।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন, রেমডেসিভিরের উচ্চমূল্য নির্ধারণ করলে আবারও পিছিয়ে পড়তে পারে প্রতিষ্ঠানটি। তারচেয়েও বড় বিপদ- জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে তাদের পেটেন্ট বাতিলের মতো ব্যবস্থার দিকে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার।
মার্কিন সরকার আগে কখনোই এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি, তবে সরকারি অনুদানে তৈরি এইচআইভির চিকিৎসায় ব্যবহৃত দু’টি ওষুধ নিয়ে মামলা করেছিল গিলিয়াডের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) সাবেক কর্মকর্তা ও হেলথটেক জিপিএসের প্রধান নির্বাহী এরিক কার্টজ জানান, দরকার হলে রেমডেসিভিরের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নিতে পারে মার্কিন প্রশাসন।
সূত্র: রয়টার্স
কেএএ/জেআইএম